মুজিবনগরের স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেরপুর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ
মুজিবনগর থেকে ফিরে সঞ্জীব চন্দ বিল্টুঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তীর্থভূমি মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে বৈদ্যনাথ তলায় আম্রকাননে শেরপুর থেকে একদল মিডিয়াকর্মী ১৩ ডিসেম্বর রবিবার বিকেল ৪টায় সেখানে সফরে যাই।
পরে সাংবাদিকগণ মুজিবনগরে স্মৃতিসৌধে পৌঁছলে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা সাংবাদিকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তারা সাংবাদিকদের বলেন আমরা ইতিহাসের সাক্ষী।
তাদের মধ্যে যেমন উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে, তেমনি কিছু কিছু ক্ষোভও বিরাজ করছে। মুজিব নগর স্মৃতিসৌধের পাশে খ্রিস্টান ক্যাথলিক মিশনারী স্কুলের সিস্টার আন্তনিয়েতা ভি, কস্তা (৭৭) বলেন,
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সকাল ৮টার সময় আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফেন্সিস গোমেস আমাদেরকে ডেকে নিয়ে আম্রকাননের একটি জায়গায় মঞ্চ তৈরির কাজে সহযোগিতা করতে বলেন। আমাদের স্কুলের প্রায় ৫শতাধিক শিক্ষার্থী মিলে স্বেচ্ছাসেবক কাজে নিয়োজিত হই সেদিন। তখন আমরা জানতাম না এখানে কি হচ্ছে।
অস্থায়ী সরকারকে গার্ড অব অনার দেন যে ১২জন আনসার তাদের মধ্যে একজন মোঃ হামিদুল হক বলেন, ১৯৭১ সালে ১৭ই এপ্রিল মিশনারী স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা মঞ্চ তৈরীসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মোঃ লিয়াকত আলী লেবু।
কিছুক্ষণ পর দেখি প্রায় দেড় শতাধিক গাড়ী দেশ বিদেশের সাংবাদিক সহ সেখানে উপস্থিত হন। তাদেরকে সংবর্ধনা জানান তৎকালীন মহকুমার প্রশাসক তৌফিক এলাহী (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা) ও মহকুমার পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব (পরবর্তীতে এসপি)। একটু পরেই আসলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ। সাথে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি উসমানী। শুরু হলো জাতীয় সংগীত ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী মন্ত্রীপরিষদের শপথ গ্রহণ।
প্রথমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহাম্মদসহ মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ। সেখানে স্থানীয় আনসার, পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধারা অস্থায়ী মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
সেখানকার বাসিন্দা হারু মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, আমরা স্কুল থেকে চেয়ার টেবিল নিয়ে এসে মঞ্চের কাজ তৈরি করি। তখনকার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ও ক্লাস ক্যাপ্টেন লিয়াকত আলী লেবু (লেবুর পিতা পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন) সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ছাত্রছাত্রীরা শতস্ফুর্তভাবে অতিথিদের বসার স্থান মিষ্টি বিতরণসহ বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করি।
লিয়াকত আলী লেবুর মত অনেকেই বলেন, অস্থায়ী সরকার গঠনের কাজে আমরা যেভাবে অংশগ্রহণ করি আজ পর্যন্ত আমরা তার কোন স্বীকৃতি পাইনি। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছেন। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের সামান্যতম স্বীকৃতি চেয়ে দাবী জানাই।
স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব হোসেন বলেন এই বৈদ্যনাথ তলায় সকল হিন্দু খ্রিস্টান মুসলমান সকলেরই অবদান ভুলার নয়। সেদিন স্থানীয় লোকদের সকল প্রকার সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছিল এই ঐতিহাসিক সরকারের শপথ গ্রহণ।
শেরপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে সেখানে পৌঁছে স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। এসময় মুজিবনগরের কর্মরত সাংবাদিকরা সহ স্থানীয় বিশিষ্টজনরাও শেরপুর প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে উপস্থিত ছিলেন।