পুলিশের সোর্স বেদু হত্যার ৩ বছর- হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ভিডিও ভাইরাল হলেও মিলছেনা বিচার

স্টাফ রিপোর্টার
শুক্র, 21.06.2024 - 07:49 PM
Share icon
Image

শেরপুরের আলোচিত পুলিশের সোর্স আব্দুল মান্নান বেদু নিখোঁজের তিন বছর পার হলেও মিলেনি তার সন্ধান। ২০২১ সালের ১৪ মার্চ নিখোঁজ হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখনও জীবিত বা মৃত সন্ধান করতে পারেনি তাকে। অপরদিকে তার পরিবারের দাবি, এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিদের তথ্য দিয়ে বার বার পুলিশকে ধরিয়ে দেয়ায় হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়েছেন বেদু।

সেই মাদক কারবারিদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ায় বেদু হত্যায় অংশ নেয়া কছিম উদ্দিন নামের এক ব্যাক্তি তার দোষ স্বীকার করে রাজস্বাক্ষী হয়ে ঘটনার বর্ণনা করেছেন স্থানীয়দের কাছে। তার দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ও বেশ কিছু অডিও ক্লিপ ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনা ফাঁস করে দেয়ার সেই মাদক কারবারিরা কছিম উদ্দিনকেও করেছে হত্যার পরিকল্পনা।

এঘটনায় ৩ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করলেও কোন মামলাই নেয়নি পুলিশ। পরে নিখোঁজ বেদুর ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার শেরপুর আদালতের বিজ্ঞ সি.আর কগনিজেন্স কোর্টে ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। যার সিআর মোঃ নং-২৫৮/২০২৪।

বর্তমানে মামলাটি পিবিআই এর তদন্তাধীন থাকলেও মামলার রাজস্বাক্ষী কছিম উদ্দিনের জবানবন্দী গ্রহনে নেয়া হচ্ছেনা আদালতে। এই সুযোগে চক্রটি নানা চাপ ও হত্যার মতো হুমকি দিচ্ছে কছিম উদ্দিনকে। তবে পিবিআই’র দাবি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে মামলাটিকে।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা এলাকার চিহ্নিত মাদক সেবন, ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহের সাথে জড়িত। অপরদিকে নিখোঁজ আব্দুল মান্নান বেদু পুলিশের সোর্স ছিলেন। মামলার প্রধান আসামী খোকা শিকদার সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। সে মাদক মামলায় কয়েকবার পুলিশের কাছে আটক হয়ে হাজতে যান। এর পর থেকেই তাকে হত্যা করার গভীর ষড়যন্ত্র করে চক্রটি। কয়েকবার তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে ২০২১ সালের ১৪মার্চ রফিক নামের এক ব্যক্তি তাকে ডেকে নিয়ে সঙ্ঘবব্ধভাবে হত্যা করে। এঘটায় ২০২১ সালের ২০ মার্চ তার স্ত্রী সবুজা বেগম শেরপুর সদর থানায় একটি সাধারন ডাইরী করেন। যার নাম্বার -১০১৭। এর পর আর কোন অগ্রগতি নেই তদন্তে।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেদু হত্যার বিষয়ে একটি ভিডিও ও কিছু অডিও ভাইরাল হবার পর ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি একই গ্রামের ছামির উদ্দিনের ছেলে মো. কছিম উদ্দিন (৩৭), মৃত হোসেন আলীর ছেলে খোকা মেম্বার (৪৮), খোকা মেম্বারের ছেলে মো. ইসরাফিলসহ (২৭) হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে তিন জনকে সদর থানার পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক করে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত জেল হাজতে পাঠায়।

মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম জানায়, পূর্ব শত্রæতার জের ধরে আমার বাবাকে হত্যা করেছে চিহ্নিত মাদককারবারিরা। হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া একজনের শিকারোক্তিমূলক বক্তব্য ও ঘটনার বর্ণনা করা গোপন রেকর্ড ফাঁস হবার পর ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়েছে। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় ও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করায় তারা লাশের দেহাবশেষ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে আমি বাদি হয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছি। পিবিআই এর দপ্তরে গিয়ে রাজস্বাক্ষীকে বার বার ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাকে কেন আদালতের সামনে নিয়ে জবানবন্দি নেয়া হচ্ছেনা এটা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। আমার পিতার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

রাজস্বাক্ষী কছিম উদ্দিন বলেন, আমাকে টাকার লোভ দেখিয়েছিলো তাই লোভে আমি তাদের সাথে হত্যাকান্ডে অংশ নিয়েছিলাম। বেদুকে গলায় ফাঁস দেয়ার সময় তাদের নির্দেশে আমি তার পা ধরে রেখেছিলাম। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছেলে আমাকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে একটি মিথ্যা বয়ান মোবাইলে রেকর্ডও করিয়ে নিয়েছে যেন ঘটনাকে আড়াল করা যায়। আমি ঘটনার বর্ণনা পুলিশ ও এলাকাবাসিকে দিয়েছি। আমি ভুল করেছি এর জন্য আমি স্বাস্তি পেতে রাজি আছি। তবে আমি সবার বিচার চাই।

এ বিষয়ে ভাতশালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার বলেন, বেদু পুলিশের সোর্স ছিলো। মামলার অভিযুক্ত খোকা মেম্বার আমার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। সে মাদক কারবারের সাথে জড়িত এবং মাদক সহ কয়েকবার সে পুলিশের কাছে ধরা পরেছে। তার জের ধরে বেদুর সাথে ঝামেলা চলছিলো।

এ ব্যাপারে মামলার আইনজীবী এডভোকেট আলমগীর কিবরিয়া কামরুল জানান, হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামিদের আটক করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করালে হত্যা রহস্যের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে। এছাড়াও ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড এ হত্যা কান্ডের বিষয়টির স্পষ্ট তথ্য আছে।

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, আমরা ঘটনা তদন্তে অভিযোগে উল্ল্যেখিত স্থানে ভেকু দিয়ে মাটি খনন করে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে স্থানে লাশের হদিস পাওয়া যায়নি। বর্তমানে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে পিবিআই তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

এ ব্যাপারে জামালপুরের পিবিআই পুলিশ সুপার এম এম সালাহ উদ্দীন বলেন, আমাদের কাছে মামলাটি আসার পর থেকেই সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছি। শিঘ্রই এই মামলাটির রহস্য উদঘাটন করতে পারবো।

এ ঘটনার ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান আসামী খোকা মেম্বার ও তার ভাই মো. খলিল বলেন, আমরা এর সাথে জড়িত নই। আমাদের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে।

Share icon