শেরপুর শহরের অক্সিজেন ভান্ডার খ্যাত নিউমার্কেটের গাছ কেটে ফেললেন পৌর কর্তৃপক্ষ !!

সম্পাদক-প্রকাশকঃ মারুফুর রহমান মারুফ
শনি, 29.06.2024 - 10:21 PM
Share icon
Image

শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র অক্সিজেনের ভান্ডার খ্যাত পৌর নিউমার্কেট এর গাছগুলো কেটে ফেললেন মেয়র। বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বসানোর জায়গার অভাবে এ গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন। এদিকে নিউমার্কেটের এই শীতল ছায়া ঘেরা গাছগুলো কেটে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের সচেতন মহল। 

জানা গেছে, একসময় এই পৌর নিউমার্কেটটি ছিল জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের বিচরণ ভূমি। এই নিউমার্কেটের খোলা চত্বরে এবং সুবিশাল পুকুর পাড়ে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দদের চলত জম্পেশ আড্ডা। পর্যায়ক্রমে সেই সুবিশাল পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয় বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। এছাড়া বাকি খোলা অংশটুকু করা হয় মার্কেট। এই নিউমার্কেট প্রাঙ্গণটি সর্বশেষ যেটুকুই খোলা ছিলো সেসব জায়গায় বেশ কয়েকটি কড়ই গাছ ছিলো। এই কড়ই গাছের নিচে পাকা বেঞ্চের মধ্যে প্রচন্ড গরমে ক্লান্ত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সময় কাটাতেন যুব সমাজ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। কিন্তু শীতল ছায়ার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে ফেলল সাধারণ মানুষ। ২৯ জুন শুক্রবার নিরিবিলি সময়ে পৌর কর্তৃপক্ষ গাছগুলো কেটে ফেলে। এ সময় স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস থেকে প্রতিবাদ জানানো হলে গাছের সামান্য কিছু অংশ রেখে দেয়। যদিও গাছগুলো বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। শহরের সচেতন মহলের প্রশ্ন প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো এই গাছগুলো কেনই বা কাটা জরুরি হয়ে পড়লো পৌর কর্তৃপক্ষের। 

এ বিষয়ে ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হাবিব জানায়, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে একটি ট্রান্সফরমার বসানোর আবেদন করা হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ ট্রান্সফরমার বসানোর জায়গা না পেয়ে গাছগুলো কাটার কথা বলেন বলে জানায় ওই কমিশনার। পরবর্তীতে বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে মেয়রের নির্দেশেই রেজুলেশনের মাধ্যমে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 

এদিকে, যদিও নিয়ম রয়েছে সরকারি বা বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের গাছকর্তনের প্রয়োজন হলে বন বিভাগ তথা উপজেলা ও জেলা পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির সভায় অনুমোদনের মাধ্যমে এর সিদ্ধান্ত নিতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই গাছগুলো কাটার ব্যাপারে পৌরসভা পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির কোন অনুমতি না নিয়েই নিজেরাই রেজুলেশন করে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নিউমার্কেট চত্ত্বর এলাকায় অসংখ্য মানুষ প্রচন্ড গরমে যে শীতল ছায়া পেতেন তা আর পাবে না। সেই সাথে ওই গাছে ছিল বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। সেটিও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। 

এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস এর সাধারণ সম্পাদক কাজী মারুফুর রহমান জানায়, নিউমার্কেটের গাছ কাটার বিষয়ে আমরা প্রথম বাধা দেই এবং আমাদের প্রতিবাদে পৌর মেয়র এর সাথে কথা বললে তিনি গাছের সর্বশেষ অংশটুকু কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই গাছ কাটার বিষয়ে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। 

এ বিষয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জন উদ্যোগ এর আহবায়ক বলেন, প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এই পৌর শহরে কোথাও কোন গাছ নেই, গাছের নিচে বসে শান্তির পরশ নিবে সে জায়গাটুকু নেই। নিউমার্কেটের ওই গাছগুলোর নিচে বসে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ একটু স্বস্তি পেতেন। কিন্তু গাছগুলো কেটে ফেলা হলো এতে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা উন্নয়নের পক্ষে তবে পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। আমরা চাই গাছ রক্ষা করেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা হোক।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন জানান, নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে একটি ট্রান্সফর্মার বসানো খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। তারা বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করলে গাছগুলো স্থানে ট্রান্সফরমার বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরে আমরা পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে গাছগুলো কেটে ট্রান্সফরমার বসানোর চিন্তা করেছিলাম। তবে আপাতত গাছগুলোর বাকি অংশ আর কাটা হবে না বলে তিনি জানান।

Share icon