সকলের কাছে স্যার খ্যাত সৈয়দ আব্দুল হান্নান গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা সিটি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। গুরুতর অসুস্থ আপাদ মস্তক এই শিক্ষাবিদ ১৯৬৪ সালের ১৬ জুলাই শেরপুর সরকারী কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সর্বশেষ ১৯৯৩ সালের ৩০ জানুয়ারি একই কলেজ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নেন।
ভাষা সৈনিক সৈয়দ আব্দুল হান্নানের ছেলে ডা. সৈয়দ আব্দুল আদিল রূপস জানায়, তার বাবা শেরপুর পৌরশহরে মধ্যশেরীপাড়াস্থ বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ১৫ দিন আগে ঢাকায় এনে বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখানো হয়। গত ৪ দিন আগে তার শাররীক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে রাখা হয়।
তিনি এখনও গুরুতর অসুস্থ তবে ১০ ফেব্রুয়ারী শনিবার পর্যন্ত অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে গেলেও রোবরাব সকাল থেকে অবস্থা অবনতির দিকে। ডাঃ রুপস তার বাবার জন্য দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাবার হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীসহ দেশবাসির কাছে দোয়া চেয়েছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়,ভাষাসংগ্রামী ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ হিসেবে সৈয়দ আব্দুল হান্নান শেরপুরের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব যাকে সবাই ‘হান্নান স্যার’ হিসেবে একনামে চিনে।১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং সক্রিয় ভাবে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষার দাবীতে মিছিল চলাকালে তিনি ও পরে তার বড় ভাই ছাত্রনেতা সৈয়দ আব্দুস সাত্তার গ্রেফতার হন।
ভাষা আন্দোলনের অংশ নেওয়ার সুবাধে বিশিষ্ঠ ভাষা সৈনিক গাজিউল হকের সাথেও সৈয়দ হান্নানের নিবিড় সখ্যতা ছিল। ২০০৫ ও ২০০৯ সালে ভাষা সৈনিক হিসেবে দু’বার তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হন। ভাষা আন্দোলন ছাড়াও তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে যুদ্ধে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সাহায্য সহযোগীতা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালিন শেরপুরের বুদ্ধিজীবি ও মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ভাবে সাহায্য করার অপরাধে তাকে ৩ বার গ্রেফতার করা হয়।
৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় দ্বিতীয় বার গ্রেফতারের দিনটি শেরপুর বাসীর হৃদয়ে এখনও রক্ত ক্ষরণের দিন হিসেবে স্বরণীয়। সেদিন ছিল ১৩ মে ১৯৭১ শান্তিবাহিনীর সদস্যরা এই শিক্ষাবিদকে গ্রেফতার করে হাফ প্যান্ট পড়িয়ে শরীর জুড়ে কালি মাখিয়ে, মাথা মুড়ো করে কোমড়ে দড়ি বেঁধে সারা শহরে প্রদক্ষিণ করায়। এ সময় তিনি ৪বার অজ্ঞান হয়ে যান। স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করলেও তিনি কখনও মুক্তিযোদ্ধার সনদের জন্য আবেদন করেনি।
সৈয়দ আব্দুল হান্নান ১৯৩২ সালে ২৫ ডিসেম্বর শেরপুরে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা সৈয়দ আব্দুল হালিম, মা রাবেয়া খাতুন। তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জনক তিনি। ১৯৫২ সালে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে তিনি আই.এস.সি পাশ করে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫৬ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে এম.এ এবং ১৯৬৪ সালে এল.এল.বি পাশ করেন ।