শেরপুরে মাদ্রসা কমিটির দু’পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ১০: কাঁদানে গ্যাস ও ৬৭ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ

সম্পাদক-প্রকাশকঃ মারুফুর রহমান মারুফ
শনি, 07.07.2018 - 11:18 PM
Share icon
স্টাফ রিপোর্টার : শেরপুরে তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসার কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় এক পক্ষের হাতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মিনহাজ উদ্দিন লাঞ্ছিত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শর্টগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ৭ জুলাই শনিবার দুপুরে শহরের মুন্সী বাজার এলাকার মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল সমাপ্ত নকরেক (২৭), মীরগঞ্জ এলাকার হাসান (২৫) ও গাজীরখামার এলাকার মনিরকে (২৫) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি গঠনের জন্য সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যথাক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুল ওয়াদুদ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন । কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত একটি পক্ষ মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাইফুল ইসলাম স্বপনকে রাখার ব্যাপারে বিরোধিতা করে আসছিলেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিনহাজ উদ্দিন মিনাল, ফখরুল মজিদ, খন্দকার নজরুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনোরুল হাসান উৎপল এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব আহম্মেদ শাকিলসহ শহরের পূর্বাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর রুমান , সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. বায়েযিদ হাসানসহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এসে হাজির হন। এ সময় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬২ রাউন্ড রাবার বুলেট ও পাঁচ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হন। আতঙ্কে শহরের মুন্সীবাজার ও নয়আনী বাজার এলাকার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিনহাজ উদ্দিন মিনাল অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত মাদ্রাসার বর্তমান কমিটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সেখানে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের লোকজনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। জামায়াত শিবিরের ওই সব লোক এই মাদ্রাসা থেকে সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড করছেন। এর প্রতিবাদ করায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীরের ছোট ভাই ইয়াকুব আলী আজ শনিবার তাঁকে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করেন। অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান বলেন, তাঁর ছোট ভাই তাঁকে (মিনহাজ উদ্দিন মিনাল) বা অন্য কাউকে লাঞ্ছিত করেনি। অপরদিকে মাদ্রাসা কমিটির বর্তমান সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এই মাদ্রাসা একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। দলমত নির্বিশেষে সকলের সাহায্য-সহযোগিতায় এটি পরিচালনা করা হয়। এখানে ব্যক্তি বিশেষ বা কোন দলের রাজনৈতিক কর্মকা- করার কোন সুযোগ নেই। এ ছাড়া কমিটি গঠনের আজকের সভা মুলতবি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও ৬২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Share icon