শেরপুরে সেতু নির্মাণে দুর্নীতি: দুই কর্মকর্তার বদলির আদেশ
সময় ডেস্ক নিউজঃ শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে দুইটি ব্রীজ নির্মানে অনিয়মের অভিযোগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছে।
শেরপুরে দুইটি সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করতে গিয়ে নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহারের অভিযোগে সম্প্রতি নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন শেরপুর সদর-১ আসনের এমপি ও সরকার দলীয় হুইপ আতিউর রহমান আতিক। নির্মাণ কাজ বন্ধ করার ক’দিন পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় একজন উপ-সচিব ও একজন সহকারি সচিবসহ দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।
পরে ৮ জুলাই বিকালে ও বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণায়ের উপ-সচিব আজিজুর রহমান ও সহকারী সচিব মাহবুব-এ-এলাহীর নেতৃত্বে সেতু নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেন।
এ ঘটনায় শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদকে ফেনী জেলায় এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজাহারুল ইসলাম আজাদকে মেহেরপুর জেলায় বদলির আদেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী। 
সেতুর কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লিমিটেড প্রায় ৪০ কোটি টাকার কাজ পায়। সেতু দুটি নির্মাণের শুরুতেই বালুমিশ্রিত পাথর, আয়রন বালু এবং পূর্বের ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রীসহ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সেতু নির্মাণে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
শেরপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নিজস্ব অর্থায়নে ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৫২ মিটার দৈর্ঘ দুটি কজওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যার পানি প্রবাহিত হলে বছরের তিন মাস শেরপুর- জামালপুর মহাসড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। দুটি কজওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে রৌমারী, রাজিবপুর, বকশীগঞ্জ ও শেরপুর জেলা শহর থেকে জামালপুর হয়ে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে উত্তর বঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে।
তবে কাজের শুরুতেই অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টার প্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড-এর ঠিকাদার শেরপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান হাবিব ও সাব-এ্যাসিস্টেন্ড ইঞ্জিনিয়ার আজাহারুল ইসলাম আজাদের যোগসাজেসে শুরু থেকেই ব্রিজের পাইলিং-এর কাজে নিম্নমানের লোকাল মরা পাথর ও সাবেক রাস্তার ঢালাই উঠিয়ে খোয়া তৈরি করে এই সব নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে পাইলিং-এর কাজ শুরু করার।
এদিকে
অভিযুক্ত মোজাহার এন্টার প্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড-এর ঠিকাদার প্রতিনিধি শামিম মিয়া জানান, এলসি পাথর না থাকায় সিলেটের পাথর তারা ব্যবহার করছেন, তবে পুরাতন রাস্তা ভেঙ্গে খোয়া ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন।
কাজের অনিয়ম নিয়ে শেরপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান হাবিব বলেন, তার সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোন যোগসাজেস হয়নি।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপ-সচিব আজিজুর রহমান বলেন, সেতুর পাইলিং ঢালাইয়ের ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী ল্যাব টেস্টের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শুধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রাঃ) লিমিটেড নয় এ কাজের সাথে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও (আর-৪৬০) সড়কের শিমুলতলী ও পোড়াদাহ এলাকায় আঠারো মাসের প্রকল্প মেয়াদে শিমুলতলী সেতুতে ১২৫.৪৯৭ মিটার দৈর্ঘ্যে ১৮ কোটি ৭৫৮ লক্ষ টাকা ও পোড়াদাহ সেতুতে ১২৫.৪৯৯ মিটার দৈর্ঘ্যে ২০ কোটি ৯২৩ লক্ষ টাকা প্রকল্প মূল্য ধরা হয়েছে।