শেরপুরে তৃতীয় লিঙ্গ হিজড়ারা পাচ্ছে সরকারি ঘর

সম্পাদক-প্রকাশকঃ মারুফুর রহমান মারুফ
রবি, 07.02.2021 - 03:09 AM
Share icon
Image

স্টাফ রিপোর্টারঃ শেরপুর জেলায় বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) জনগোষ্ঠি পাচ্ছে সরকারি ঘর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজাধীন আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর সরকারি খাসজমিতে হিজড়াদের জন্য গড়ে ওঠেছে গুচ্ছগ্রাম। 

সেই গুচ্ছগ্রামে জেলার ৪০ জন হিজড়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে জমিসহ ঘর। সাথে রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা। এছাড়া আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারি হিজড়াদের আয়বর্ধনমুলক কর্মকান্ডের জন্য থাকছে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর একটি পুকুর, শাক-সবজী, ফসল আবাদের জন্য রাখা হয়েছে খোলা জায়গা, আত্মকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত হচ্ছে মাল্টিপারপাস ঘর।

গুচ্ছগ্রামের সাথেই রয়েছে ৮ একরের বড় একটি সরকারি খাস বিল। সেটিও সেখানে বসবাসকারি হিজড়াদের লীজ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে শেরপুরে তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) জনগোষ্ঠির আবাসন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য জানান, সদরের কামারিয়া ইউনিয়ন ভুমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হুরমুজ আলী। তিনি জানান, জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব-এর আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় হিজড়াদের এ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঘর ও স্থাপনা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন কবুলিয়তনামা তৈরী ও জমির নামজারির প্রক্রিয়া চলছে।

খুব শীঘ্রই নিবন্ধিত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের মধ্যে জমি সহ এসব ঘর হস্তান্তর করা হবে। কেবল জমিসহ ঘরই নয়, ওই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে সমাজের অবহেলিত ও অপাংক্তেয় তৃতীয় লিঙ্গ হিজড়া জনগোষ্ঠির জীবনমান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে। যাতে তারাও সমাজের মুলস্রোতে একিভুত হতে পারে। 

ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রণমেন্ট অ্যাণ্ড ডেভলপমেন্ট (আইইডি)'র সহযোগিতায়  নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর ও জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার যৌথ আয়োজনে শহরের মডেল গার্লস ডিগ্রী কলেজ মিলনায়তনে এ মতিবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

 এসময় শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদা, সদস্য আরেহিী জাহান মৌমিতা তাদের বক্তব্যে গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করায় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।একইসাথে তারা হিজড়াদের বিষয়গুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এসময় তারা বলেন, গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে তাতের বাস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এখন তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সহযোগিতা কামনা করেন।

তারা বলেন, আমরা ভিক্ষাবৃত্তি চাই না, চাঁদাবাজি করে জীবন চালাতে চাইন। আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। কর্ম করে খেতে চাই। মৌমিতা হিজড়া ড্রাইভিং শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তাদের সকলের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির কথা তুলে ধরেন। 

সভায় উপস্থিত উপস্থিত আইডিয়াল প্রিপারেটরি এন্ড হাইস্কুলের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবর রহমান সুজা মৌমিতা হিজড়ার ড্রাইভিং শেখার সমস্ত খরচ বহন এবং ড্রাইভিং শেষে তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর প্রতিশ্রæত ব্যক্ত করেন। উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যক্ষ তপন সারোয়ার হিজড়াদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক দল তৈরী ও বিনামুল্যে নাচ-গান শেখানোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাসরিন রহমান ফাতেমা ও সদস্য সদর উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা শামীমা সেলাই, বিউটিফিকেশন, রান্নাবান্না, নকশীকাঁথা সহ তাদের বিভিন্ন ট্রেডে হিজড়াদের আত্মকর্মী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে উল্লেখ করেন।

এছাড়া তাদরকে ঘূর্ণায়মান তহবিলের ঋণ প্রদানের কথাও জানান। নারী উদ্যোক্তা আইরীন পারভীন হিজড়াদের বিনামুল্যে দক্ষ সুচিশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে তার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা জানান। 

জনউদ্যোগ শেরপুর আহ্বায়ক শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ শিব শংকর কারুয়া, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মকর্তা কবি হাজানুজ্জামান সরাফত, সাংবাদিক হাকিম বাবুল, আইইডি ব্যবস্থাপক মানিক পাল, জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাসুম ইবনে শফিক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে গুচ্ছগ্রামে ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত হিজড়াদের নিবন্ধন কাজের জন্য কবুলিয়ত সম্পাদনের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। এ উপলক্ষে হিজড়াদের পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকেই মিষ্টিমুখ করানো হয়।

 

Share icon