‘মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন ৭১টিভির শেরপুর প্রতিনিধি শাকিল মুরাদ
বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘প্ল্যান মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড- ২০২১’ ‘আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে' পেয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের শেরপুর জেলা প্রতিনিধি শাকিল মুরাদ। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে সনদ, ক্রেষ্ট ও সম্মানী তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস প্রকল্পের আওতায় এ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডটি আয়োজন করা হয়।
পুরস্কার বিতরণীর আগে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একটি দেশকে যথাযথভাবে উন্নত করতে হলে জোর দিতে হবে সামাজিক উন্নয়নের দিকেও। বাল্যবিয়ে এই পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনেকটা পথ এগোলেও করোনা আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে নতুন চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, সমাজের চিন্তাচেতনা সহসা পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তন আসছে, সবাই এর বিরুদ্ধে কথা বলছি। কিন্তু মূল কারণের সমাধান না হলে আমরা আমাদের কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
একাত্তর টিভির ‘একাত্তর জার্নাল’র উপস্থাপিকা মিথিলা ফারজানা সঞ্চালনায় এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, প্লান ইন্টান্যাশনাল বাংলাদেশের গালর্স রাইট'র পরিচালক কাশফিয়া ফিরোজ, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব শাহনাজ খুশি প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক কর্মী শাহনাজ খুশি বলেন, মেয়েরাই এখন নিজেদের অধিকার নিশ্চিতে সচেতন। তারা নিজেরাই এখন পারছে নিজেদের বাল্যবিয়ে রুখে দিতে। গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির এখানে আরো জোরালো ভূমিকা রয়েছে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গার্লস রাইটস পরিচালক কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, আমরা সারাদেশে জরিপ চালিয়ে দেখেছি, অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৩৫ শতাংশের মতে যৌন হয়রানির ভয় বাল্যবিয়ের অন্যতম মূল কারণ। ২৫.৬ শতাংশের মতে সামাজিক বিভাজন জনিত উদ্বেগের কারণে বাবা-মা মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন।
এই ভয় দূর করতে হবে। বিয়ে যে সমাধান নয়, এই বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে পারে গণমাধ্যম, বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রথম নির্বাচিত নারী সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে। মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারি অনেক উদ্যোগ রয়েছে। অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন করে তোলা, তাদের ক্ষমতায়ন করা জরুরি যেন তারা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে না দেয়, মেয়েদের কোনভাবেই বোঝা না মনে করে এবং মেয়েদেরকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। আর এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম কাজ করে আসছে।
বিশিষ্ট সিনিয়র সাংবাদিক জ ই মামুন বলেন, বাবা-মায়ের অনেকের ধারণা বিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। এই অনিশ্চয়তা থেকে বাবা-মা’দের মুক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রসহ সবাইকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে।
পুরস্কার পেয়ে শাকিল মুরাদ বলেন, মফস্বল পর্যায়ে এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি এই স্বীকৃতি আমার কর্মস্থল একাত্তর টিভির ‘দেশযোগ’ টিমকে উৎসর্গ করলাম। আশা করি প্রতি বছরই এমন আয়োজন করবে সংগঠনটি।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের শংকর বড়ুয়া পান্না বলেন, আমাদের মিডিয়া পুরস্কারের জন্য চারজনের জুরিবোর্ড ছিল। অভিজ্ঞ গণমাধ্যমকর্মী ও বিচারক সকল প্রতিযোগীর মধ্য থেকে বিজয়ীদের নির্বাচন করেন।
উল্লেখ্য, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গণমাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিবেদন দ্বারা অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস’ শীর্ষক এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ৯জন সাংবাদিক এ সম্মাননা পান।