বিএনপির নাম ভাঙিয়ে শেরপুর প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন ; ৮ মাসে ৩ কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার
সোম, 02.09.2024 - 08:01 PM
Share icon
Image

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত ৮ মাসে সাংবাদিকদের সংগঠন শেরপুর প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন হয়েছে ৩ টি। স্থানীয় আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিকের হস্তক্ষেপে দীর্ঘদিন যাবত প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন করে পরিচালিত হয়ে আসছিলো। তবে বিএনপি সমর্থিত কিছু সাংবাদিক নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রেসক্লাবে তালা বন্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে আতিক এমপির কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছিল। এ বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু বিজয়ী হলে তিনি ক্লাবের মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে আরেকটি নির্বাহী কমিটি ঘোষণা দেয়।   

এদিকে সরকার পতনের পর একই ধারাবাহিকতায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কিছু সাংবাদিক প্রেসক্লাবে প্রবেশ আবার একটি নির্বাহী কমিটি ঘোষণা দেয়। ওই কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মূল ধারার সাংবাদিকরা পরক্ষণেই প্রেসক্লাবে তালা বন্ধ করে তিব্র প্রতিবাদ জানায়। অপরদিকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কমিটি গঠনের ব্যাপারে জেলা বিএনপির নেতারা ওই কমিটি গঠনের ব্যাপারে অবহিত নয় মর্মে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। 

সুত্রে জানা যায়, শেরপুর প্রেসক্লাব গঠিত হয় ১৯৮০ সালে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রেসক্লাবের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭ জন। জেলা আওয়ামী লীগের এক সাংবাদিক নেতা ক্লাবের বাইরের প্রকৃত সাংবাদিকদের সদস্য করার নাম করে গণহারে নামে বেনামে কার্ডদারি অসাংবাদিকদের সম্পৃক্ত করে ১৭ সদস্য থেকে ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রেসক্লাব করা হয়। এরপর থেকেই ক্লাবের স্বাভাবিক পথ চলায় বিপত্তি শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে প্রথমে সাবেক এমপি আতিউর রহমান আতিক তার আস্থাভাজনদের দিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আতিউর রহমান আতিক কে পরাজিত করে এমপি হন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানুয়ার হোসেন ছানু। এবার ছানু আগের সব কমিটি বাদ দিয়ে তিনিও তার পছন্দের লোকদের দিয়ে একটি নতুন কমিটি গঠণ করেন।

সর্বশেষ ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটালে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে সাংবাদিক কাকন রেজাকে সভাপতি ও মাসুদ হাসান বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে ২২ আগষ্ট সন্ধায় কয়েকজন সাংবাদিক মিলে প্রেসক্লাবের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে একটি ২২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ঘোষণা দেয়।

কিন্তু এ কমিটি গঠনের পর শেরপুর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। উঠে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড়। পূর্বের কমিটি থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক এমপি আতিক, ছানু ঘোষিত কমিটির সদস্যরাই এখন ভুল পাল্টিয়ে নিজেদের বিএনপির কমিটি বলার চেষ্টা করছেন। তবে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ এ অবৈধ কমিটি সম্পর্কে অবগত নয় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন।

এবিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী বলেন, দুষকৃতকারী কিছু সাংবাদিক বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদের মিস গাইড করে প্রেসক্লাবের কমিটি করেছে। এই কমিটি সম্পর্কে আমরা অবগত নই। সাংবাদিকদের কমিটি সাংবাদিকরাই করবে এটা আমরা কেন করতে যাবো।

জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, আমরা এই উদ্ভুত পরিস্থিতি এবং আইনশৃংখলা রক্ষার্থে নিয়মের বাইরে গিয়েও দলীয় প্যাডে আমরা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করে সাংবাদিকদের অবগত করি যে, প্রেসক্লাবের এই কমিটি সম্পর্কে অবগত নই।

এদিকে শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জ্বল বলেন, সাংবাদিকদের একটি চক্র বিএনপির নাম ভাঙিগে রাতের আধারে প্রেসক্লাবের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ২২ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা দেয়। বিএনপি নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, আমরা এই কমিটির ব্যাপারে অবগত নই এবং তারা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে যা তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Share icon