ভাষাসৈনিক আব্দুর রশীদের ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী
সেলিম শাহী, শেরপুরঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের শেরপুর অঞ্চলের অন্যতম সদস্য ভাষা সৈনিক আব্দুর রশীদের ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী ৫ জুন শুক্রবার।
ভাষা সৈনিকের পরিবারের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে সামাজিক দূরত্ব মেনে চাপাতলী পৌর কবরাস্থানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কবর জিয়ারত।
এছাড়া শেরপুর টাউনের তেরা বাজার মাদ্রাসায় কোরআন খানী ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রয়াত এই ভাষা সৈনিকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদে দোয়া করা হবে।
আব্দুর রশীদ ১৯৩১ সালের ২৫ জানুয়ারি শেরপুর পৌর শহরের শেখহাটি মহল্লায় এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া একাডেমীতে অধ্যয়নকালে ছাত্রাবস্থায় তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এরপর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট, ৬২’র শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৭০’র নিবার্চন, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে অবদান রাখেন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় কারারুদ্ধ হন।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হলে এর প্রতিবাদ করায় তৎকালীন সরকার তাকে ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে ৯ মাস কারারুদ্ধ করে রাখেন।
আজীবন সংগ্রামী সাবেক ন্যাপ নেতা আব্দুর রশীদ তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দেশ বরেন্দ্র বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সান্নিধ্যলাভ করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর বাকশালের শেরপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি শেরপুর জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তা আব্দুর রশীদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল সামস ও জামায়াত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন।
বিশেষ করে শেরপুরের কুখ্যাত আল বদর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফঁাসির দন্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদাই প্রতিবাদী ভুমিকা পালন করেন। যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানকে সামাজিকভাবে বয়কট করে শেরপুরে এক অন্যন্য নজীর স্থাপন করেন।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি শেরপুর জেলা ঘাতক দালাল নিমর্ূল কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
তিনি ৮৪ বছর বয়সে বার্ধক্য জনিত কারণে ২০১৪ সালের ৫ জুন ভোর সাড়ে তিনটায় শহরের গৃদানারায়নপুরের নিজস্ব বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি দৈনিক যুগান্তর, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ এর শেরপুর জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রহিম বাদলের বাবা।