বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট দখল চেষ্টার অভিযোগ
ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, মোঃ আকতার হোসেন, কাসেম মাসুদ ও এ আর খান। তারা নিজেদের মত কমিটি বানিয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট দখলের চেষ্টা করছেন। আর দখল চেষ্টাকারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্য নির্বাহী সদস্য শরীফ মোঃ বেদুইন হায়দার । দখল চেষ্টাকারিদের বিরুদ্ধে এ মর্মে রাজধানী দারুস্ সালাম থানায় গত ২৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে তিনি একটি সাধারণ ডায়রী করেন বলে জানা যায়।
সুত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যার নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন নং ৪১ ও প্রতীক ‘ছড়ি’। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছড়ি প্রতীকে ৬৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। এই নির্বাচনের আগে অর্থাৎ বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটকে কেন্দ্র করে কয়েকটি অনিবন্ধিত দল ও সামাজিক ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনের পূর্বে ‘গণমুক্তি জোট’ নামে একটি নির্বাচনী জোট গঠন করা হয়। জোটভুক্ত দল জাতীয় লীগের সভাপতি ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকে মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান দাবী করে বিভিন্ন ধরণের প্রতারনা করছে বলে মুক্তিজোট এর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না বলেন গত ১৯শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে মুক্তিজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা চলছে এই শিরোনামে সোস্যাল মিডিয়াতে তারা ছবিও প্রকাশ করেন। অথচ ছবিতে যাদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে তারা মুক্তিজোটের কেউ নন। যা মুক্তিজোটকে শুধু হেয় প্রতিপন্ন করাই না মুক্তিজোটের সাথে চরম প্রতারনা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, মুক্তিজোটকে কেন্দ্র করে কয়েকটি অনিবন্ধিত দল ও সামাজিক ব্যক্তিদের নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের সভাপতি- ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদকে জোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) এর সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্নাকে জোটের প্রধান সমন্বয়ক এর দায়িত্ব দিয়ে ১১ মার্চ ২০২৩ খ্রিঃ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল রুমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জোটের ঘোষণা করা হয়। জোটভুক্ত দলসমূহ হল- ১. বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), সংগঠন প্রধান- আবু লায়েস মুন্না, পরিচালনা বোর্ড প্রধান- মোঃ শাহজামাল আমিরুল ২. বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, সভাপতি- ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ ৩. সোনার বাংলা আন্দোলন, সমন্বয়ক- কাসেম মাসুদ ৪. গণ কংগ্রেস- চেয়ারম্যান- মোঃ আকতার হোসেন ৫. ডেমোক্রেটিক লীগ, সভাপতি- প্রফেসর এ আর খান, মহাসচিব- সাহেদ আহম্দে শ্রাবন ৬. সোনার বাংলা পার্টি, মহাসচিব- সৈয়দ হারুন-অর-রশীদ ৭. জনতা পার্টি, সভাপতি- ড. সরোয়ার হোসেন ৮. স্বাধীনতা পার্টি, সভাপতি- বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ ৯. জাতীয় জনমুক্তি পার্টি, সভাপতি- মমতাজ উদ্দিন মজুমদার ।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইটে ৪১ নম্বর দল হিসাবে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট এর সংগঠন প্রধান হিসেবে আবু লায়েস মুন্না ও পরিচালনা বোর্ড প্রধান হিসেবে মোঃ শাহজালাল আমিরুল এর নাম ও ছবি পাওয়া যায়।
জোট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্নার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘গনমুক্তি জোট ছিল নিছক একটা নির্বাচনকালীন জোট, যার নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথে কার্যক্রমও শেষ হয়ে যায়।’ অথচ জোটভুক্ত দলের নেতারা এখন আমার দলের নেতা হওয়ার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করে যারা এই দলের নেতৃত্ব দাবি করছে তারা আসলেই রাজনৈতিক অর্বাচীন। তিনি আরও বলেন একটি দলের নেতা হতে গেলে সেই দলের কিছু সাংগঠনিক ধাপ পার হতে হয় এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটে তো সাংগঠনিক চর্চাটা আরও প্রায়োগিক। এই কাজ কোন সুস্থ চিন্তার রাজনীতিবিদ করতে পারেনা বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে জাতীয় লীগের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার ফুয়াদ উত্তর দেন। তিনি বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধানের দাবী করছেন জানতে চাইলে বারবার তিনি গনমুক্তি জোট এর চেয়ারম্যান বলেন এবং নির্বাচন কালীনসময় গণমুক্তি জোট থেকে করা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি ও কাগজপত্র পাঠান। তাকে তার দল বাংলাদেশ জাতীয় লীগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন নির্বাচনের আগে জাতীয় লীগের নিবন্ধনের জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন, তার দল নিবন্ধন না পাওয়াই তিনি এখন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট করবে।
দারুস সালাম থানা সূত্রে জানা যায় এই ব্যাপারে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ইতোমধ্য উপরোক্ত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। থানার তদন্ত কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা বিভিন্ন সময় দল ভাগ হতে দেখেছি। দেশ স্বাধীনের পর আওয়ামী লীগ ভাগ হয়ে আওয়ামী লীগ মিজান নামে পরবর্তীতে জাসদ ও জাতীয় পার্টি একই নামে চেয়াম্যানের নাম ব্রাকেট বন্দী করে দল করেছে তবে তারা সবাই নিজ নিজ দলের কর্মী ছিল কিন্তু জোট করে দল দখলের চেষ্টা জাতি আগে দেখেনি। বাংলাদেশে এটাই প্রথম জনতার মধ্যে বিষয়টা নিয়ে কৌতুহল।
একটি স্বাধীনদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একটি দল দখল বা সিনতায়ের চেষ্টা তো এক প্রকার গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি।
সূত্র: দৈনিক খবর বাংলাদেশ