শেরপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দর্জি শ্রমিকদের ধর্মঘট ! ঈদের পোশাক তৈরি বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার
বুধ, 12.06.2024 - 08:50 PM
Share icon
Image

শেরপুরে মুজরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে জেলা শহরের টেইলার্সে কর্মরত দর্জি শ্রমিকরা। দাবি আদায়ে গত ৬ দিন ধরে দর্জি শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখেছে। এর ফলে জেলা শহরে ঈদের পোশাক তৈরির অর্ধ শতাধিক কারখানায় কার্যক্রম বন্ধ। টেইলার্স মালিকপক্ষের দাবি, গত ঈদে তাদের দাবির মুখে মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু এবার ঈদকে সামনে রেখে এখন তাঁদের জিম্মি করছেন দর্জিরা। এতে ঈদ উপলক্ষে যেখানে রাতদিন কর্মব্যস্ততায় মুখর থাকার কথা, সেখানে হঠাৎ ধর্মঘটের কারণে জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেটে অবস্থিত টেইলার্সগুলোতে যেন সুনশান নীরবতা।অপরদিকে ঈদের সময় শার্ট, পেন্ট, পায়জামা ও পাঞ্জানির কাপড়ের দোকান গুলোতে বেচাকেনা বন্ধ করেছে। ফলে গজ কাপড় বিক্রির দোকান গুলো লোকসান গুনছে। চলতি মাসের গত ৮ তারিখ থেকে কাজ বন্ধ করে দিলেও সমাধানের উদ্যোগ নেই স্থানীয় প্রশাসনের।

Image

দর্জি শ্রমিকরা জানান, তারা কাজ করেন মালিকের দোকানে। কাজের বিনিময়ে মালিকরা তাদের মুজরি দিয়ে থাকেন। তারা যে মজুরি দেয় তাতে তাদের পোষায় না। গত ১৫ দিন আগে থেকে মৌখিকভাবে মালিক পক্ষকে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে কোন কাজ না হওয়ায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকরা এতে কর্ণপাত করেননি। মালিকরা একটা শার্টের মুজুরি নেয় ৪শ টাকা আর আমাদের দেয় মাত্র ১২১ টাকা। এই অল্প টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলেনা। আমাদের বেশি দাবি নয়। মাত্র ৫টাকা থেকে ১০টাকা বৃদ্ধি করলেই আমরা কাজে ফিরবো।

Image

কয়েকজন নারী ক্রেতা জানান, প্রতি বছরই কাপড় কিনে ঈদের আগে নকশা অনুযায়ী পোশাক বানিয়ে নেন তাঁরা। এজন্য শহরের লেডিস টেইলার্স গুলোই ভরসা। তবে এবার দর্জিরা ধর্মঘটে থাকায় কোনো টেইলার্স কাপড়ের অর্ডার নিচ্ছেনা। ফলে কাপড় কেনা হলেও তা দিয়ে ঈদের নতুন পোশাক তৈরি করতে পারছে না।

Image

মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আবুল হোসেন বলেন, প্রতিবছর নতু পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ পড়ি। এবারও প্রস্তুতি নিয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবির কাপড় কিনলাম। কিন্তু কাপড় তৈরি করতে পারছি না। ঈদে নতুন জামা পরতে পারবো কিনা তা নিয়ে আমি সন্ধিহান।

জেলা পর্যায়ে কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঈদের ছুটি হবার সাথে সাথেই বাড়ি চলে যাবো। স্ত্রী ও মেয়ের কাপড় টেইলার্সে পরে রয়েছে। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। বাচ্চাদের পছন্দের কাপড় ছাড়া ঈদ ভাবতে পারছি না।

এ বিষয়ে শেরপুর দর্জি মালিক বহুমুখি সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি নেপাল চন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোছা আলম সরকার জানান, শ্রমিকদের ধর্মঘট সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। চলতি বছরের মার্চ মাসের ৯ তারিখে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া মেনে নতুন মজুরি নির্ধারন করা হয়। সেই সময় মালিক ও শ্রমিক পক্ষের লিখিত দুই বছরের চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতে আগামী ২০২৬ সালের আগে আর মজুরি বৃদ্ধি হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে কোন ধরনের নোটিশ না দিয়ে তারা আবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ঈদে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এভাবে বার বার মজুরি বৃদ্ধি করলে আমাদের দোকান বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

এ বিষয়ে শেরপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজ এর সভাপতি আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। আমরা উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর চেষ্টা করবো।

Share icon