শেরপুরে সড়কের নিম্ন মানের কাজের প্রতিবাদে মানববন্ধন করায় যুবক কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার
বৃহস্পতি, 11.07.2024 - 08:08 PM
Share icon
Image

শেরপুরে এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়িত একটি সড়কের নিম্ন মানের নির্মান কাজের প্রতিবাদে মানববন্ধন করতে গিয়ে উল্টা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতারের স্বীকার হয়েছেন এক যুবক। গতকাল ১০ জুলাই রাত ১১টার দিকে তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে ১১জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ওই যুবকের নাম মো. শাখাওয়াত মিয়া (২৪)। সে সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মুদিপাড়া গ্রামের সাদ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনাটি বর্তমানে টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনগন, মুক্তিযুদ্ধা সহ সুশীল সমাজের মধ্যে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি এভাবে প্রভাবশালীদের রোষানলে পরতে হয় তাহলে আর কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাবেনা।

জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪ কোটি ৭ লাখ টাকায় শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের (বাজিতখিলা-গাজিরখামার) সড়কের মেরামতের কাজ করছিলেন মেসার্স আকরাম এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজটি নির্মাণের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের জন্য এলাকাবাসী প্রতিবাদ করে আসছিলো। শুধু নির্মান কাজের অনিয়ম নয়, রাস্তা খুড়াখুড়ি করে বেশ কয়েকবার কাজ বন্ধ করে রাখে তারা। এতে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলরত অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পরে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে অবৈধ ক্ষমতা খাটিয়ে তাদের খেয়াল খুশি মতো কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে শুরু হয় কার্পেটিং এর কাজ। কার্পেটিং করার সপ্তাহ পেরোলেও সড়কের অনেক অংশে হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছিলো কার্পেটিং। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ হয় এলাকাবাসী। এর পর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান এলজিইডি কে বারবার বলেও সমাধান না পেয়ে চলতি বছরের ৩০ মে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। এছাড়াও নির্মানকাজের অনিয়ম সাংবাদিকদের চোখে ধরা পরায় দেশের স্বনামধন্য টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।

এলাকাবাসীরা জানান, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশের জেরে চাপে পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এর জের ধরে টাকার জোড়ে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ করায়, ওই প্রতিবাদিদের শায়েস্তা করতে ১০ জুলাই শেরপুর সদর থানায় মিথ্যা মামলা করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আকরাম হোসেন। মামলায় ১০ জনকে নামীয় ও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। যার নাম্বার-২৮। মামলায় অভিযোগ করা হয়, রাস্তা খুড়াখুড়ি করে ৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। এছাড়াও ঠিকাদারের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে স্থানীয়রা কয়েকজন।

এ বিষয়ে শেরপুর জেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযুদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু বলেন, এলাকাবাসীদের মধ্যে যারা সত্যের পক্ষে মানববন্ধন করেছে তাদের কে আমি সেলুট জানাই। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের বিষয়ে আমি তীব্র্র নিন্দা জানাই। এই ঘটনাটা অত্যন্ত লজ্জার। নি¤œমানের কাজের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে নির্বাহী প্রকৌশলি মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে সাসপেন্ড করার প্রয়োজন ছিলো। এছাড়াও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিলো। অথবা তার লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করার দরকার ছিলো।

নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক ও শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই পৃথিবীতে যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে তারাই জুলুমের স্বীকার হয়েছে। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। আমাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। দুর্নীতি গিয়ে ঠেকেছে চরম পর্যায়ে। সামাজিক অবক্ষয়ের তলানিতে চলে গেছি আমরা। তবে এই ঘটনায় আমি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। তাহলেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা  শেরপুর এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান ও স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আকরাম এন্টারপ্রাইজ এর কর্ণধার আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। সরকারি অর্থ লুটপাটকারী ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে আমাদের এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। 

এ বিষয়ে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, ঠিকাদার আকরাম হোসেন কয়েকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি চাঁদাবাজি সহ সম্পদ নষ্টের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত শাখাওয়াত মিয়াকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Share icon