শেরপুরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের হামলায় সাংবাদিক আহত, থানায় মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
বৃহস্পতি, 11.07.2024 - 08:21 PM
Share icon
Image

শেরপুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক সাংবাদিকের মাথা ফাটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মিজান ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। এসময় তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয় টাকা সহ তার ব্যবহৃত মানিব্যাগ। গত ৮ জুলাই সোমবার সকালে সদর উপজেলার শিমুলতলী বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ মামলা গ্রহন করেছে ১০জুলাই বুধবার দিবাগত রাতে। আহত ওই সাংবাদিকের নাম মো. এনামুল হক। সে দৈনিক বাংলার নবকন্ঠ পত্রিকার শেরপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। এঘটনায় ভাইস চেয়ারম্যান মিজান উল্টা ওই সাংবাদিকে নানা হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত ভিডিও প্রকাশ করে নানা অপবাদ ছড়াচ্ছেন। বর্তমান পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় তার ও তার অনুসারীদের হুমকির ভয়ে এখন সাংবাদিক এনামুল তার গ্রামের বাড়ি ছেড়ে জেলা শহরে অবস্থানরত বড় ভাইয়ের বাড়িতে অবস্থান করছে।

জানা যায়, গত ৮ জুলাই সোমবার সকালে বাড়ি থেকে পার্শবর্তী জামালপুর জেলায় যাওয়ার সময় সদর উপজেলার শিমুলতলী বাজারে পৌছার সাথে সাথে ভাইস চেয়ারম্যান মিজান তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পূর্ব শত্রুতার আক্রোশে হামলা চালায় সাংবাদিক এনামুলের উপর। এসময় মিজান নিজে দেশীয় চাকু দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ করেন ওই সাংবাদিক। এতে তার কপালে গভীর ক্ষত হয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে স্থানীয়রা শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে এ ব্যাপারে এনামুল বাদি হয়ে শেরপুর সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক এনামুল বলেন, পূর্ব হতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আশফুল আলম মিজানের সাথে আমার বিরোধ চলছিলো। আর কয়েক সপ্তাহ পরেই শেরপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারনাও। নির্বাচনকে ঘীরে আমি নতুন এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে চলাফেরা করছি। এই কারনেই সে আমাকে তার জন্য ক্ষতিকর মনে করছে। এর আগেও সে দুইটি মামলায় আমার নাম জড়িয়েছে। তার নারী কেলেঙ্কারির একাধিক ঘটনা রয়েছে। সেই খবর অনেক সাংবাদিক সংবাদপ্রত্রে প্রকাশ করেছেন। এর জন্যেও সে আমাকে দায়ী করে। এ সকল ঘটনার জের ধরেই সে এই হামলা করেছে। এছাড়াও সে নিজের হাতে আমার পকেট থেকে টাকা সহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি এতো ছোট মনের হতে পারে আমি চিন্তাও করতে পারিনা। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

এ ব্যাপারে চরপক্ষিমারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানী মন্টু বলেন, আসলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই এই ঘটনা হয়েছে। তবে তারা আগে দুইজন ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলো। একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও দিনদুপুরে লোকজন নিয়ে এসে একজন সাংবাদিকের উপর হামলা করার ঘটনাটি অত্যন্ত নেক্কারজনক।

বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় উল্ল্যেখ করে শেরপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মো. মারুফুর রহমান মারুফ বলেন, খবর প্রকাশের পর প্রতিটি মানুষ তার রাগ সাংবাদিকদের উপর পুষে রাখে। সময় সুযোগ পেলে সেটা কাজে লাগায়। সাংবাদিক এনামুলের ব্যপারেও তাই হয়েছে। আমরা এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন প্রতিনিয়ত হচ্ছি । তবে একজন জনপ্রতিনিধি নিজ হাতে এমন কাজ সাংবাদিকের উপর করতে পারে এটা মানা কষ্টের। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

এ ব্যাপারে শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি দেবাশীষ ভট্রাচার্য্য বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি কর্তৃক সাংবাদিকের উপর হামলা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আইনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তাই আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি মনে করি, সুষ্ঠু তদন্ত হলে এর বিচার সাংবাদিকরা পাবে। দ্রæত সময়ের মধ্যে এর বিচার দাবি করছি।

তবে অভিযুক্ত ওই ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সব মিথ্যা। আমি এর সাথে জড়িত নই।

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, সাংবাদিক এনামুল হকের উপর হামলার প্রেক্ষিতে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।

Share icon