বৃষ্টিতে খেলা না হলে ফাইনালে যাবে কুমিল্লা !
সম্পাদক-প্রকাশকঃ মারুফুর রহমান মারুফ
শনি, 09.12.2017 - 08:00 PM
সময় ওয়েব ডেস্ক।। অগ্রহায়নের শেষভাগে হঠাৎ বৃষ্টি! তবে বিনা মেঘে নয়। বলে কয়েই। আবহাওয়ার পূর্বাভাষে আগেই বৃষ্টির কথা বলা ছিল। সেই মতোই পরশু বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে কোথাও কোথাও ইলশে গুড়ি বৃষ্টি। কাল শুক্রবার সেভাবে বৃষ্টি না হলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। আকাশ গোমড়াই ছিল।
আর আজ শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সর্বত্র থেমে থেমে বৃষ্টি। কখনো ইলশে গুড়ি, টিপ টিপ। আবার কোন সময় মাঝারি বর্ষণে পথ ঘাট, ভিজে একাকার। বছরের এ সময়ে বৃষ্টি- বাংলাদেশে নুতন নয়। আগেও হয়েছে বহুবার।
এ বৃষ্টিকে সাধারণতঃ শীতের আগমনী বার্তা বলেই ভাবা হয়। সবাই ধরেই নেন, এ বৃষ্টির জের মানেই শীত শুরু হওয়া।
কিন্তু বৃষ্টি ভাবিয়ে তুলেছে দেশের অগণিত ক্রিকেট অনুরাগিকে। ভাগ্যিস আজ কোন খেলা ছিল না। কোয়ালিফায়ার ও ইলিমিনেটর পর্বের একটি করে দুটি ম্যাচ ভালোয় ভালোয় শেষ হয়ে গেছে গতকালই।
এখন বাকি আছে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার। যেখানে মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং রংপুর রাইডার্স। ওই ম্যাচের বিজয়ী দল পৌঁছে যাবে ফাইনালে। বিজয়ী দল ১২ ডিসেম্বর শেরে বাংলায় ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের প্রতিপক্ষ হবে।
এমন সমীকরণ যখন সামনে, ঠিক তখনই বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে বৃষ্টি। এমন নয়, শুধু আজই বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাষে আগামীকাল রোববার সারা দিনই প্রায় বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। কখনো হালকা, আবার কোন কোনো সময় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাষ রয়েছে।
সকালে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাষ আছে। আর দুপুরের পর থেকে মাঝারি বা ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। যেমন ধারাই যাক না কেন- বৃষ্টির সম্ভাবনা শতভাগ। যেমনই হোক, বৃষ্টির শঙ্কাই বিপিএল ভক্ত-সমর্থকদেও চিন্তিত করে তুলেছে। কাল যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর রংপুর রাইডার্সের কোয়ালিফায়ার ২-এর খেলা!
যদি সত্যি সত্যি বৃষ্টি হয়, তাহলে কি হবে? এখন এটাই ভক্ত-সমর্থকদের মনে বড় প্রশ্ন। যদিও ফাইনালের আগে ১১ ডিসেম্বর কোন খেলা নেই। আবার সেদিনটিকে রিজার্ভ ডে’ বলেও চিহ্নিত করা নেই। তাহলে বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক কারণে খেলা মাঠে না গড়ালে কি হবে? বিপিএলের নিয়মেই বা কি লিখা আছে?
এটাতো আর রাউন্ড রবিন লিগের ম্যাচ নয় যে, বৃষ্টিতে খেলা না হওয়া মানেই ম্যাচ পরিত্যক্ত। দুই দল সমান এক পয়েন্ট করে পাবে। এটাতো কোয়ালিফায়ার ম্যাচ। ‘সাডেন ডেথ।’ নকআউট। জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হতেই হবে। এক পক্ষকে জয়ী আর অন্য পক্ষেকে হারতেই হবে।
এখন প্রশ্ন হলো একটি বলও যদি মাঠে না গড়ায় তাহলে কোন দলকে জয়ী ধরা হবে? ফাইনালে উঠবে কে? কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স না রংপুর রাইডার্স? তা নিয়ে রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা, গুঞ্জন।
এর সত্যিকার ও নিশ্চিত ব্যাখ্যা এবং আসলে কি হবে, না হবে- সে সম্পর্কে যার সবচেয়ে ভালো জানার কথা, এবারের বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও ঠিক স্পষ্ট ও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না- বৃষ্টিতে একদম খেলা না হলে কি হবে?
বৃষ্টি চোখ রাঙ্গাচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাষে বৃষ্টি হবে বলে জানানো হয়েছে। যদি বৃষ্টি হয়ই- তাহলে আপনাদের করণীয় কি? কুমিল্লা না রংপুর- কোন দল ফাইনালে যাবে? সেটারই বা প্রক্রিয়া কি হবে?
জালাল ইউনুস বেশ গোছানো জবাব দিয়ে বলেছেন, নিশ্চিত ও শেষ বলে কোন কথা নেই। তিনি শুরুতে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত এবারের বিপিএলের বাই লজে যা আছে, সেটাই বহাল আছে। বাইলজে পরিষ্কার বলা আছে, কোয়ালিফায়ার ও এলিমিনেটর পর্বে বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক কারণে খেলা আদৌ না হলে যে দল লিগ বা পয়েন্ট টেবিলে ওপরে, সেই দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
সবার জানা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স রাউন্ড রবিন লিগ শেষে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে থেকে কোয়ালিফায়ার খেলছে। আর রংপুর রাইডার্স গতকাল (শুক্রবার) ইলিমিনেটর ম্যাচে খুলনা টাইটান্সকে হারিয়ে দিলেও সেরা চারে তাদের অবস্থান ছিল সবার পেছনে। মানে চার নম্বরে।
এর মানে আজ রাত পর্যন্ত বহাল থাকা প্লেয়িং কন্ডিশন বা বাই লজ অনুসরণ করলে কাল শেষ পর্যন্ত খেলা না হলে কপাল পুড়বে মাশরাফি-গেইল ও ম্যাককালামের রংপুর রাইডার্সের। না খেলেই ফাইনালে চলে যাবে তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
তবে সেটাই শেষ কথা নয়। বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটি চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস আরও একটি বড় তথ্য দিয়েছেন। সে জন্য অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নেই। জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, ওপরে যে নিয়মের কথা বলা আছে, সেটা প্রাথমিক বাইলজ বা প্লেয়িং কন্ডিশন; কিন্তু এর বাইরেও কথা আছে। প্লেয়িং কন্ডিশনে নাকি এও বলা আছে, টুর্নামেন্ট কমিটি বিপিএলের স্বার্থে যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
অর্থাৎ, এখন যে আইনে কুমিল্লাকে বিজয়ী ঘোষণার কথা বলা হয়েছে, শেষ মুহূর্তে সেই নিয়ম পাল্টে খেলা রিজার্ভ ডে‘তেও গড়াতে পারে। বিপিএল গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের দেয়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তারা আগামীকাল বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, আসলে কোন নিয়ম মেনে এবার দ্বিতীয় ফাইনালিস্ট নির্ধারণ করা হবে।
শনিবার রাত পৌনে আটটায় জালাল ইউনুস জানান, এখনও পর্যন্ত প্রচলিত ধারাই বহাল আছে। সেটা কি? অর্থাৎ বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটালে খেলা নির্ধারিত সময়ের পরে শুরু হবে। কার্টল টাইম দেয়া থাকবে। সেই সময় অনুযায়ী ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে হাতে যে সময় থাকবে, সেই সময় হিসেব করে যত ওভার খেলা হওয়া সম্ভব, ঠিক তত ওভারের ম্যাচ হবে। সেটা কমে ১৪, ১২, ১০ এমনকি ৫ ওভারও হতে পারে।
সর্বনিম্ন ৫ ওভারের ম্যাচ আয়োজনের নিয়ম আছে। যদি বৃষ্টির কারণে বিলম্ব হতে হতে সেই ৫ ওভারের খেলায় আয়োজন সম্ভব না হয়, তাহলে এক ওভারের ‘সুপার’ ওভারে ম্যাচ ভাগ্য নির্ধারিত হবে। আর সেটাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে যে দলের পয়েন্ট বেশি বা যে দল লিগ টেবিলে ওপরে অবস্থান করছে- সেই দল চলে যাবে ফাইনালে।’
কিন্তু সেই নিয়ম শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে কি না? সেটাই প্রশ্ন। যার জবাব নেই বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটি চেয়ারম্যানের কাছে। তাই তার শেষ কথা, ওই নিয়ম এখন পর্যন্ত বহাল আছে। তবে সেটা শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ টুর্নামেন্টের স্বার্থে শেষ মুহূর্তে ওই বাই লজ এবং প্লেয়িং কন্ডিশনের কথা পরিষ্কার বলা আছে। আমরা কাল (রোববার ) বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিয়ম পাল্টানোর কথা বাইলজ ও প্লেয়িং কন্ডিশনে পরিষ্কার উল্লেখও আছে এবং তাতে প্রতিটি দলের সম্মতিও আছে। সব দলের কর্তাদের স্বাক্ষরও নাকি আছে। তার মানে বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত খেলা না হলে কালকের ম্যাচ পরের দিনেও গড়ানোর সম্ভাবনা আছে।