শেরপুরের নকলায় জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি: বাংলাদেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলে কুকুরকে টিকা দান (এমডিভি) কার্যক্রম চলছে। এর অংশ হিসেবে শেরপুরের নকলা উপজেলা থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে কুকুরের টিকাদান-এমডিভি (২য় রাউন্ড) কার্যক্রম-২০২১ এর অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে নকলায় উপজেলায় ব্যাপক হারে কুকুরকে টিকা দান (এমডিভি) কার্যক্রম আগামী ৪ জুন থেকে শুরু হয়ে ৮ জুন পর্যন্ত চলমান থাকবে। এই সময়ের মধ্যে উপজেলার ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার কুকুরকে ২য় রাউন্ডের টিকা প্রদান করা হবে।
২ জুন বুধবার দুপুরের দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গৌড়দ্বার ইউপির চেয়ারম্যান শওকত হোসেন খান মুকুল, নকলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, এমডিভি কার্যক্রমের সুপারভাইজার মো. আরিফুর রহমান ও হায়দর আলম টিটু প্রমুখ।
এমটিপিআই আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় এ অবহিতকরণ সভায় উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. একেএম নাজমুস সাকিব, সহকারী সার্জন ডা. তানজিনা মাহবুব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নকলা ইউপির চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সুজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উরফা ইউপির চেয়ারম্যান রেজাউল হক হীরা, গনপদ্দী ইউপির চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুল, নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, সেনেটারী ইন্সপেক্টর হাসান ফেরদৌস আলম, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট আবু কাউছার বিদ্যুৎ, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, এমডিভি কার্যক্রমের রিসোর্স পারসনগন ও বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, জলাতঙ্ক একটি ভয়ংকর মরণব্যাধি, এ রোগে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ। পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও প্রতি ১০ (দশ) মিনিটে একজন এবং প্রতি বছরে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যায়। জলাতঙ্ক রোগটি মূলত কুকুরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমে এদেশে বেশি ছড়ায়। তবে বিড়াল, শিয়াল, বেজী ও বানরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমেও এ রোগ হতে পারে বলে তিনি জানান।
এমডিভি কার্যক্রমের সুপারভাইজার মো. আরিফুর রহমান জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়ালের কামড় বা আচঁড়ের শিকার হয়ে থাকে, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। এ ছাড়াও প্রায় ২৫ হাজার গবাদি প্রাণী এ রোগের শিকার হয়ে থাকে। তিনি জানান, বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে বছরে প্রায় ২ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত। ২০১৬ সালে মধ্যে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শতকরা ৯০ ভাগ কমিয়ে আনা হয়।
এমডিভি কার্যক্রমের অন্য এক সুপারভাইজার হায়দর আলম টিটু এক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে জানান, ২০২২ সালের মধ্যে এদেশকে জলান্তক মুক্ত করার লক্ষে ২০১০ সাল থেকে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এদেশের সকল জেলায় মোট ৬৭টি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর জন্য সরকারি ভাবে উপজেলা পর্যায়ে কোন টিকা বা ভ্যাক্সিন সরবরাহ করা হয়না। তাই কাউকে কুকুর বা জলাতঙ্ক ছড়ায় এমন কোন প্রাণি কামড় দিলে দ্রুত জেলা বা বিভাগীয় কোন হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাক্সিন নিতে পরামর্শ দেন তিনি। সর্বোপরি সকল বক্তারা এ মহৎ কার্যক্রমকে সাফল্য মন্ডিত করতে সকলের সহযোগিতা কামান করেন।
জানা গেছে, কুকুরকে টিকাদান কার্যক্রমের প্রতিটি টিমের জন্য ৬ জন করে লোক/কর্মী নিয়োজিত থাকবেন। এর মধ্যে একজন করে ডাটা কালেক্টর, টিকাদানকারী, দক্ষ কুকুর ধরার লোক ও ভ্যান চালক এবং ২ জন স্থানীয় কুকুর ধরার লোক নির্বাচন করা হয়েছে।