ইহকালীন শান্তি পেতে মাদ্রাসা শিক্ষা জরুরি: ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান
ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক মানুষকে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি দিতে মাদ্রাসা শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম রিতা। তিনি বলেন, প্রতিটি মুসলিমের ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অতিব জরুরি। প্রতিটি মুসলিম পরিবারের অন্তত একটি সন্তানকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সকল মুসলিম পরিবারের অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শেরপুর জেলার নকলা উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি প্রফেসর তাসলিমা বেগম।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা মিলনায়তনে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপবৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে আপনার-আমার সবার হায়াত ক্ষণিকের। এই ক্ষণিকের হায়াতের পৃথিবী ছেড়ে আমাদের সকলেকেই একদিন চিরতরে চলে যেতে হবে। আমাদের মৃত্যুর পরে যেন আপনার-আমার নাজাতের জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করতে পারে এমন সন্তান রেখে যাওয়া প্রতিটি মুসলানের ঈমানী দায়িত্ব। তাই আমাদের উচিত সন্তানদেরকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করানো।
বর্তমানের মাদ্রাসা শিক্ষা আর আগের মতো পিছিয়ে নেই, বরং বর্তমানের মাদ্রাসা শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার চেয়েও এগিয়ে। আজকের মাদ্রাসা শিক্ষা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বাংলা ও ইংরেজী ভাষার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক আরবী শিক্ষা গ্রহন করছে। ফলে তাদের ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত নাজিল হয়। ফলশ্রুতিতে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত সন্তানরা বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষাসহ যেকোন চাকরির পরীক্ষায় অন্যসকল শিক্ষার্থীর সাথে পাল্লা দিয়ে বরাবরই এগিয়ে রয়েছে। এতে করে যেমন ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি পাওয়ার আশা করতে পারছি, তদ্রুপ আমাদের সন্তানরাও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহন করে নিজেকে উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে সক্ষমতা অর্জন করছে। বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার নিজস্ব অর্থায়নে মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে মোবাইল কনফারেন্স প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম এসব কথা বলেন। মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাহবুব হোসাইন রুপমের সঞ্চালনায় উপবৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগনের জরুরি করণিয় বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সহকারী মৌলভী মাওলানা মো. রেজাউল করিম প্রমুখ।
এসময় বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন, সহকারী শিক্ষক মোসাম্মৎ রোকেয়া আক্তার, শওকত আলী, নুসরাত জাহান নিপা, সহকারী মৌলভী মাওলানা মো. ফজলুল করিম, ক্বারী কাজীমদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান খান, জামাল উদ্দিন, কব্দুল হোসেন, আমিন মিয়া, ইয়াছিন আহাম্মেদ, আরিফ হোসেন, লাবনী বেগম ও উজ্জল মিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ইবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন, শিক্ষানুরাগী মহল, স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার গন্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মাদ্রাসার অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাঠদান ও পাঠ গ্রহন কার্যদিবসে শতকরা ৮৫ দিন উপস্থিত, মাসিক ও সাপ্তাহিক পরীক্ষায় শতকরা ৬০ নম্বর পাওয়াসহ নিজস্ব অর্থায়নের উপবৃত্তি প্রাপ্তির বিভিন্ন শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষে এদিন ইবতেদায়ী শাখার ৮২ জন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রতি ৩ মাস পর পর ইবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীদের মাঝে এ উপবৃত্তি প্রদান করা হলেও, করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারনে গত বছর নিয়মিত উপবৃত্তি প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, ইবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের অর্থ গচ্ছিত রাখতে জনতা ব্যাংক নকলা শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়েছে, যার হিসাব নং ১০০১৪৩৮৭০৭৫২। এই মহতি উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম, সাবেক সহকারী শিক্ষক তথা নকলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী তাদের ইচ্ছানুযায়ী ওই হিসাব নম্বরে এককালীন কিছু টাকা জমা করেছেন। সরকার কর্তৃক উপবৃত্তি বঞ্চিত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়নে উপবৃত্তি প্রদানের সহায়তার লক্ষ্যে চাইলে যে কেউ মাদ্রাসায় রশিদ জমাদানের শর্তে জনতা ব্যাংক নকলা শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং ১০০১৪৩৮৭০৭৫২-তে টাকা জমা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।