বাবা মা থেকেও এতিম দুই জমজ বোন!! পাশে দাড়ালো শেরপুর রিপোর্টার্স ইউনিটি
বাবা-মা থেকেও যেন নেই, এতিম দুই বছর বয়সের জমজ দুই বোন জেসমিন-ইয়াসমিনের। শেরপুর সদর উপজেলার বলাইচর ইউনিয়নের চর জঙ্গলদি গ্রামের ভাঙ্গা ঝুপরি ঘরে দাদী ফিরোজা বেগমের কাছে অভাবকে কাঁধে করে চার মাস বয়স থেকে বড় হচ্ছে তারা।
জানা গেছে, জঙ্গলদি গ্রামের ঢাকায় অবস্থানকারী দিন মজুর সামেদুল ও রোকেয়া বেগমের ঘরে প্রায় দুই বছর আগে জন্ম হয় জমজ কন্যা সন্তান জেসমিন ও ইয়াসমিনের। জন্মের ৪ মাস বয়সে মা রোকেয়া বেগম মানষিক বিকার গ্রস্থ হয়ে পড়লে দাদী ফিরোজা বেগম তাদের নিয়ে গ্রামে চলে আসে। আর মা রোকেয়া চলে যায় ঢাকায় তার বাবার বাড়ি। এদিকে একই সময়ে অভাবের কারণে বাবা সামেদুলও নিরুদ্দেশ হয়ে পড়ে। আজ পর্যন্ত কোন খোঁজ পওয়া যাচ্ছে না তার।
ফলে দাদী বিধবা ফিরোজার কাঁধে এসে পড়ে জেসমিন-ইয়াসমিনের ভাগ্য। গ্রামে দাদী ফিরোজা বেগমের ৫ শতক জমির উপর ভাঙ্গাচোড়া ঝুপরি ঘর। যে ঘর থেকে রোদ-বৃষ্টির খেলা চলে প্রতিনিয়ত।
মাত্র ৪ মাস বয়সের জেসমিন-ইয়াসমিনকে বাঁচিয়ে রাখতে গ্রামের এবাড়ি-ওবাড়ি গিয়ে অসহায় নাতনীদের দেখিয়ে চাল-চিড়ে আর দশ-বিশ টাকা নিয়ে এসে নিজের পেট আর নাতনীদের খাদ্যের সংস্থানের নামে যুদ্ধ করছে প্রতিনিয়ত।
মায়ের বুকের দুধ হারিয়ে দুধের শিশুদের কপালে আজো জুটেনি গাভীর দুধ। তাদের জীবন বাঁচাতে চালের গুড়োর সাথে পানি দিয়ে তৈরি করেন বিকল্প চালের দুধ। জেসমিন-ইয়াসমিন এসব খাবারের কারণে অপুষ্টিতেও ভুগছে দির্ঘদিন থেকে।
দাদী ফিরোজা বিধবা ভাতার কার্ড পেলেও গত বছর জেসমিন-ইয়াসমিনের জন্য একটি পুষ্টি কার্ড পাওয়ার জন্য স্থানীয় সাবেক এক মেম্বার এর কাছে গেলে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করলে ফিকে হয়ে যায় সেই কার্ড পাওয়ার আশা।
এদিকে স্থানীয় এক যুবকের মাধ্যমে জেসমিন-ইয়াসমিনের জীবন যুদ্ধের খবর পেয়ে সম্প্রতি তরুন সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত শেরপুর রিপোটার্স ইউনিটি’র (এসআরইউ) সভাপতি মারুফুর রহমান সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে ওই পরিবারকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এসআরইউ সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম এবং সিনিয়র সাংবাদিক জিএম বাবুল ও রফিক মজিদের নেতৃত্বে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় এসআরইউ এর সাংবাদিক নেতা শফিউল আলম সম্রাট, মো. আলমগির হোসের, মেহদি হাসান শামীম, শাহিনূর রহমান পনির, ফজলুল করিম, মনিরুজ্জামান মনির, রাশেদুল ইসলাম, রাজন মিয়া ও মনির। সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা সংগ্রহ করে দাদীর জন্য শাড়ী, জেসমিন-ইয়াসমিনের জন্য জামা-পেন্ট, নানা রকমের শিশু খাদ্য এবং ঈদের দিনের চাল-চিনি, লবন, সেমাই, লুডুস, তেল-সাবানসহ বিভিন্ন পণ্য এবং ঈদের দিন মাংস কেনার জন্য নগদ টাকা দিয়ে আসেন দাদীর হাতে।
এসময় দাদী ফিরোজা বেগম কান্না বিজরিত কণ্ঠে বলেন, ‘নাতনী দুইডারে নিয়া খুব কষ্টে আছি। গ্রামের মানুষেরও অভাবের সংসার তাই তারা যেটুকু করে তাই অনেক। স্থানীয় চেয়াম্যান-মেম্বার ও সরকারী কোন সাহায্য সহযোগীতা কিছুই পাই না। আইজ বাদে কাইল ঈদ, ঘরে এক কেজি চালও নেই। তবে আইজ রাইতে শহর থাইকা সাংবাাদিকরা আইসা কাপড়-চোপড় ও বিভিন্ন খাবার দিয়ে গেছে। আল্লায় যেন মুখ ফিরাই চাইছে। ঈদের দিন এবারই পরথম (প্রথম) ভালো কিছু খাবার পামু।
এ বিষয়ে বলাইরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম মনির জানান, জেসমিন-ইয়াসমিনের বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে পরিষদের মেম্বার পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি। যদি সত্যিই তারা অসহায় হয় তবে সহযোগিতা করবো।