শেরপুরে স্কুলছাত্র রিমন হত্যা মামলায় মাস পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ
শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের খুনুয়া গ্রামের স্কুলছাত্র রিমন হাসান হত্যার এক মাস পরিয়ে গেলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো সংস্থা হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এমনকি এই হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় একজন আসামিও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাদের চিহ্নিত করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়ছেন নিহতের পরিবার এবং এলাকাবাসী। যে স্কুলের বাথরুমে রিমনের বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, সেই স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তারা বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনো উদ্ধার না হওয়ায় এবং অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা ছেলে-মেয়েদের ওই স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। তবে পুলিশ বলছে, মূল হোতাদের দ্রুত খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট রাতে রিমনকে হত্যা করে খুনুয়া গ্রামের ভীমগঞ্জ বাজারের ড্যাফোডিল প্রিপারেটরি অ্যান্ড হাইস্কুলের বাথরুমে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। রিমন ওই গ্রামের ভ্যানচালক সুমন মিয়ার ছেলে এবং ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরে এই ঘটনায় সুমন বাদী হয়ে সন্দেহভাজন ৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। ঘটনার ৭ দিন পর গত ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ১০ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে জেলা শহরে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
রিমনের পরিবারের অভিযোগ, এই মামলায় পুলিশ খুব একটা তৎপর নয়। পুলিশ ছাড়াও বিষয়টি পিবিআই, সিআইডি ও র্যাবের নজরে রয়েছে। তারপরও রহস্যজনকভাবে কোনো আসামি এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি।
রিমনের মামা মাসুদ রানা দাবি করেন, রিমনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কোনাইচা পাড়া গ্রামের স্থানীয় ব্যবসায়ী আল আমীনের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে আঁখির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক নিয়ে আঁখির পরিবারের আপত্তি ছিল। তাই তারা ঘটনার রাতে রিমনকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
রিমনের ফুপু মছিরনের দাবি, আঁখি রিমনকে অনেক চিঠি ও ডায়েরি উপহার দিয়েছে। সেসব চিঠি এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। রিমনের সঙ্গে আঁখির সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর আঁখির মা-বাবা রিমনকে বেশ কয়েকদিন মারধর করেছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কাছে নতুন করে মার খাওয়ার ভয়ে রিমন তা আমাদের জানায়নি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সুমন মিয়া ও তার স্ত্রী লাইলি বেগম জানান, তারা মামলার পর থেকেই থানায় অনেক ঘোরাঘুরি করছেন, ওসি সাহেবকে আসামিদের বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, আসামিদের ব্যাপারে তথ্য দিলেও তাদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো ওসি বাদীপক্ষকে আসামি ধরে আনতে বলেন। আসামি পক্ষের দুই আত্মীয় পুলিশে চাকরি করেন এবং তারা মামলায় প্রভাব খাটাচ্ছে বলেও বাদী অভিযোগ করেন।
এদিকে মামলা হওয়ার পর থেকে আঁখির বাবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও এ হত্যাকাণ্ডে আঁখির বাবা জড়িত নন বলে দাবি করেছেন আঁখির মা মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘হত্যার সঙ্গে আমার স্বামী বা আমরা কেউই জড়িত নই। আঁখির বাবা এবং চাচা-জেঠারা কেউ রিমনকে চেনেই না। এসব মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। আমার মেয়ের সঙ্গে তার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।’
তবে চিঠি ও ডায়েরির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চিঠি দিয়েছে ভাই হিসেবে, আর ডায়েরির বিষয়টি আমরা জানি না।’
এই ব্যাপারে আঁখির দাবি, ‘আমি তাকে চিঠি দিয়েছি সত্যি, তবে প্রেমের সম্পর্কে নয় বরং ভাই হিসেবে দিয়েছি। কারণ তারাও তিন ভাই এবং আমরাও তিন বোন।’
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. হান্নান মিয়া জানান, তারা মামলার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। যেকোনো সময় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এ ছাড়া এই মামলায় আসামি পক্ষের দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাব খাটানোর বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তিনি জানান, কোনো ক্ষমতাই এ মামলাকে প্রভাবিত করতে পারবে না। যদি এ ধরনের কেউ জড়িত থাকে তবে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। মামলার স্বার্থে এখন বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা দুইটা ক্লু নিয়ে কাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।