শীতের ছোঁয়ায় গারো পাহাড়ে উৎসব: গজনী - মধুটিলায় পর্যটকের ঢল

ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি
রবি, 14.12.2025 - 05:20 PM
Share icon
Image

মোঃ শাহ্ আলম, ঝিনাইগাতী, শেরপুর:
গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র শীত মৌসুমের শুরুতেই যেন রূপ নিয়েছে ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলায়। কুয়াশাঘেরা সকালে পাহাড়, সবুজ বন আর শীতল হাওয়ার টানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

গারো মা ভিলেজের কর্তব্যরত কর্মচারী আতিকুর রহমান ও পাহাড়ি রেস্টুরেন্টের ব্যবসায়ী জাকারিয়া জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পর্যটনকেন্দ্র ঘিরে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রাণ ফিরে আসবে বলে আশাবাদী তারা। দীর্ঘদিন দর্শনার্থীর অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মুখে এখন স্বস্তির হাসি।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়ের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সারা বছরই পর্যটকদের টানে। তবে শীত মৌসুমে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র ও মধুটিলা ইকোপার্কে দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। প্রতিদিনই এসব স্থানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, গজনীর ভাসমান সেতু, ওয়াটার পার্ক ও ওয়াটার কিংডম, প্যারাডোবা, ঝুলন্ত ব্রিজ, রুফওয়ে, জিপলাইনার, ক্যাবলকার, প্যাডেল বোর্ড, সাম্পান নৌকা ও ঝর্ণাধারাসহ নানা রোমাঞ্চকর রাইডস দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে ওঠা মধুটিলা ইকোপার্কের ওয়াচ টাওয়ার ও অন্যান্য বিনোদন ব্যবস্থাও পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন রিসোর্ট ও ক্যাফে গড়ে ওঠায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

Image

শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাস, ট্রাক, মিনিবাস, লেগুনা, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে দর্শনার্থীরা পর্যটন কেন্দ্রে আসছেন। এর মধ্যে অটোরিকশা, লেগুনা ও মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি। ফলে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের বাইরে প্রায় ২–৩ কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট।

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর থেকে আসা দর্শনার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, “শীত উপলক্ষে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। অনেক লোকজন হয়েছে। প্যাডেল বোর্ডে উঠেছি—দারুণ মজা পেয়েছি।”
জামালপুর থেকে আগত রফিকুল ইসলাম জানান, “সবুজে ঘেরা গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দিয়েছে। নতুন নতুন রাইডস যুক্ত হওয়ায় এবার আরও বেশি ভালো লাগছে।”
ময়মনসিংহ থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আসা কলেজ শিক্ষার্থী নীরব মিয়া বলেন, “বন্ধুদের নিয়ে অনেক রাইডে উঠেছি, কেনাকাটাও করেছি—সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা।”
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা মারুফা আকতার বলেন, “প্রতি বছরই ঘুরতে বের হই। এবার গজনীতে এসে গারো পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি।”

তবে মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশ ফি আগে ১০ টাকা থাকলেও বর্তমানে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে—এ নিয়ে কিছু দর্শনার্থীর মধ্যে অসন্তোষও শোনা গেছে।

স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া জানান, পর্যটকের কারণে তাদের বিক্রি বেড়েছে। পর্যটন কেন্দ্রের ইজারাদার ও ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা ফরিদ আহম্মেদ বলেন, “শীত মৌসুমে পর্যটকের যে সমাগম দেখা যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে এবার ভালো ব্যবসার আশা করছি।”

Share icon