শেরপুরে পিডিবির প্রিপেইড মিটারে প্রাথমিক সুবিধা পাবেন ৩০ হাজার গ্রাহক

সম্পাদক-প্রকাশকঃ মারুফুর রহমান মারুফ
মঙ্গল, 05.12.2017 - 04:56 PM
Share icon

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রাহক সেবা বাড়াতে এবার শেরপুরে পিডিবির আওতায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর সোমবার সকালে জেলা শহরের গোপালবাড়ী এলাকায় ওই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ। ওইসময় পিডিবির অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, সরকার সারাদেশে পর্যায়ক্রমে পিডিবির আওতায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে জেলা শহরে ৩০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়েক্রমে আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যে ৫টি উপজেলাতেই ওই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে জেলায় পিডিবির আওতায় সকল শ্রেণির মিটার রিডিং বিড়ম্বনা কমে গ্রাহক সেবা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রিপেইড মিটার-এর যত সুবিধা : বর্তমান সময়ে সবার মুখে মুখে প্রিপেইড মিটারের কথা। এখন সারাদেশে বৃহৎ পরিসারে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। মূলত গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ বিল শতভাগ আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা মতে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে সারা দেশে প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুতসেবা দেয়া হবে। প্রতিবছর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার যথাযথ হিসাব রাখা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে যায়। আবার কখনও কখনও গ্রাহক পর্যায়ের নানা কারণে বিদ্যুৎ খাতে ৫-৭% বিদ্যুৎ নষ্ট হয়। এ সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনটির মাধ্যমে শতভাগ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় নি। তাই বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে এবং বিদ্যুতের যথাযথ হিসাব রাখতেই সরকারের নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছে। প্রিপেইড মিটার সিস্টেম বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে অপচয় প্রায় শতকরা ০ ভাগে নিয়ে আসবে। মূলত প্রিপেইড মিটারের ব্যবস্থা আসলে গ্রাহকদের সুবিধার জন্যই করা হচ্ছে। প্রিপেইড মিটারের সুবিধাগুলো হল- ১। প্রিপেইড মিটারিং ব্যবস্থায় গ্রাহক ব্যবহারের আগেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। যার কারণে কোম্পানির মিটার রিডিং, বিল প্রণয়ন এবং আদায়ের কোন ঝামেলা থাকে না। ২। মিটারে প্রিপেইড সিস্টেম থাকায় গ্রাহক নির্দিষ্ট সীমার উপরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন না। ৩। গ্রাহক প্রয়োজনে মোবাইল কার্ডের মত কার্ড কিনে বা দরকার পড়লে ভেন্ডিং স্টেশনে গিয়ে নিজেই রিচার্জ করে নিতে পারবেন। ৪। মিটারে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই গ্রাহককে মিটার সংক্রিয়ভাবে সংকেত দিবে, ফলে বিদ্যুৎ সঞ্চয়ে গ্রাহক আরও সচেতন হবে। ৫। প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে বিল দেয়ার জন্য অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে আর হবে না। ৬। যেকোন সময়ে গ্রাহক দেখতে পারবেন তার কত বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে আর কত অবশিষ্ট আছে। ৭। বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ দেওয়ার আগেই সব টাকা পেয়ে যাবে। ফলে বিল তৈরি ও বিতরণের ঝামেলা ও ব্যয় কম হবে। ৮। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হবে না, ফলে লাইন কাটার টেনশন থাকবে না। ৯। গ্রাহকরা তাদের বিদ্যুৎ বিলের উপর ২% ডিসকাাউন্ট পাবেন। ১০। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারে, অযথা ভোল্টেজ উঠা-নামার ফলে বাসার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির উপর প্রভাব পড়বে না। ১১। প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে সয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ বিলের রেকর্ড থেকে যাবে। প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল জমা দেয়ার কোন টেনশন নেই। এক্ষেত্রে বকেয়া বিল থাকবে না। এই বিষয়টি বাড়ির মালিকদের জন্য একটি সুবিধাজনক বিষয়। এক্ষেত্রে ভাড়াটেদের কোন বিল বকেয়া হবে না। তারা বিদ্যুৎ ব্যবহারের আগেই বিল পরিশোধ করে ফেলবে, যার ফলে বিল নিয়ে কোন টেনশন থাকবে না। প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা যেমন সহজ, তেমনিভাবে মিটারে টাকার পরিমাণ কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এলে মিটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত দিবে। এই পর্যায়ে কার্ডের মাধ্যমে টাকা চার্জ না করলে মিটার তথা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সাপ্তাহিক বা অন্যান্য ছুটির দিনে মিটার বন্ধ হবে না। টাকা একেবারে শেষ হয়ে গেলেও সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত মিটার চালু থাকবে। এই সময়ের মধ্যে মিটার রিচার্জ করতে হবে। ভবিষ্যতে প্রিপেইড মিটারের বিল অনলাইনে লেনদেনের ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, প্রিপেইড মিটার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন আনবে।
Share icon