ফটোল্যাব ব্যবহারকারীদের তথ্য চলে যাচ্ছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে
সময় ওয়েব ডেস্কঃ ইন্টারনেট দুনিয়ার নতুন ট্রেন্ড ‘ফটোল্যাব’। আপলোডের পর এখানে ছবি দিলেই সেটিকে চকচকে-ঝকঝকে করে দিচ্ছে অ্যাপটি। কিন্ত ব্যবহারকারীরা যে বিপদ ডেকে আনছেন, সেটা কি লক্ষ্য করেছেন কখনো?। এবিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ছবি পাওয়ার বিনিময়ে যে তথ্য অ্যাপটির সঙ্গে গ্রাহকরা শেয়ার করছেন, আশঙ্কা রয়েছে সেগুলো চলে যাচ্ছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লিনারক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের মালিকানাধীন ফটোল্যাবের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। আর এটির কারণ হচ্ছে টেক জায়ান্ট আইবিএম এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তি বাতিল হওয়া। একারণে তৈরি করা হয় ফটোল্যাব ।
প্রযুক্তিভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ভার্জ বলছে, ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লিনারক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এবং তাদের মালিকানায় ১৪টি অ্যাপ আছে বর্তমানে। এগুলোর বেশির ভাগই ছবি সংক্রান্ত এবং ফটোল্যাব অ্যাপটিও ২০১০ সালেই তৈরি হয়। এত বছর অ্যাপটি আলোচনায় না এলেও আইবিএম ফেস রিকগনিশন বন্ধ করার কিছুদিনের মধ্যেই দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় অ্যাপটি।
সাইবার-৭১ এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাবের হৃদয় বলেন, প্রযুক্তি জগতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা যদি দেখেন, তাহলে দেখা যাবে, আগে থেকেই অস্তিত্ব আছে এমন একটি প্ল্যাটফর্মকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে তারা। প্রতিষ্ঠার পর তেমন পরিচিতি না পেলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্তিতে রাতারাতি আলোড়ন তৈরি করে প্ল্যাটফর্মগুলো। একই কাজ ফটোল্যাবের সঙ্গে করা হয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন অনেকদিন পর গেল ১৫ জুন অ্যাপটিকে হালনাগাদ করা হয়েছে। এটাকে ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে যে বিপুল পরিমাণ তথ্য তাদের সার্ভারে জমা হচ্ছে, সেগুলো ওদের কাছে ‘গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ’।
আরেক সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহা বলেন, একটা উদাহরণ দিই। অনেকেই আছেন যারা ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর, এটিএম কার্ড নম্বর এমনকি পিন কোড সহজে মনে রাখার জন্য মোবাইলে সেভ করে রাখেন। এখন এসব তথ্য অন্য কারও হাতে গেলে কী হতে পারে একবার ভাবুন। বিভিন্ন সময়ে আমরা এ ধরনের স্ক্যামের খবর পাই। সেগুলো কীভাবে সম্ভব হয়? এগুলোও অন্যতম কারণ। বুধবার (১৭ জুন) বাংলাদেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিতে হয়েছে।
ফটোল্যাবে এ অ্যাপটি ছাড়াও সুন্দর ছবি তোলার জন্য অনলাইনে টিপস বা সহায়তা পেতে অনেকেই গুগল প্লে স্টোর থেকে নানা ধরনের বিউটি অ্যাপ ডাউনলোডের পর ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এমন সব অ্যাপ নিরাপদ নয়। অনেক অ্যাপ আপনার তথ্য হাতিয়ে নেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বাজে লিঙ্কে নিয়ে যায়।
সম্প্রতি গুগলের নিরাপত্তা বিষয়টি স্ক্যানিংয়ে এসব অ্যাপ ধরা পড়ে। বট পরীক্ষা করা কোম্পানি হোয়াইট ওপসও এসব ক্ষতিকর অ্যাপ সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ডিজিটাল ইনফরমেশন ওয়াল্র্ড তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এসব অ্যাপ একবার ডাউনলোড করার পর অনেক সময় আইকোন হাইড হয়ে যায়। ফলে চাইলেও সেটি সহজে আনইনস্টল করা যায় না।
সম্প্রতি গুগল ৩৮টি অ্যাপ তাদের প্লে স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলেছে। এর মধ্যে ৩৫টি বিউটি অ্যাপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কারো মোবাইল ফোনে এসব অ্যাপ থাকে তাহলে দ্রুত আনইনস্টল করে ফেলা উচিত।
গুগলের ডিলিট করা ৩৫টি অ্যাপ হচ্ছে;
১.ইয়োরকো ক্যামেরা।
২.সলু ক্যামেরা।
৩.বিউটি কোলাজ লাইট।
৪.বিউটি অ্যান্ড ফিল্টার ক্যামেরা।
৫.ফটো কোলাজা অ্যান্ড বিউটি অ্যাপ।
৬.বিউটি ক্যামেরা সেলফি।
৭.গ্যাটি বিউটি ক্যামেরা।
৮.প্যান্ড সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
৯.কার্টুন ফটো এডিটর অ্যান্ড সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
১০.বেনবু সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
১১.পিনাট সেলফি বিউটি ক্যামেরা অ্যান্ড ফটো এডিটর।
১২.মুড ফটো এডিটর অ্যান্ড সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
১৩.রোজ ফটো এডিটর অ্যান্ড সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
১৪.সেলফি বিউটি ক্যামেরা অ্যান্ড ফটো এডিটর।
১৫.ফগ সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
১৬.ফার্স্ট সেলফি বিউটি ক্যামেরা অ্যান্ড ফটো এডিটর।
১৭.ভানু সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
১৮.সান প্রো বিউটি ক্যামেরা।
১৯.ফানি সুইট বিউটি ক্যামেরা।
২০.লিটল বি বিউটি ক্যামেরা।
২১.বিউটি ক্যামেরা অ্যান্ড ফটো এডিটর প্রো।
২২.গ্রাস বিউটি ক্যামেরা।
২৩.এলি বিউটি ক্যামেরা।
২৪.ফ্লাওয়ার বিউটি ক্যামেরা।
২৫.বেস্ট সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
২৬.অরেঞ্জ ক্যামেরা।
২৭.সানি বিউটি ক্যামেরা।
২৮.ল্যান্ডি সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
২৯.নাট সেলফি ক্যামেরা।
৩০.রোজ ফটো এডিটর অ্যান্ড সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
৩১.আর্ট বিউটি ক্যামেরা-২০১৯।
৩২.এলিগ্যান্ট বিউটি ক্যাম-২০১৯।
৩৩.সেলফি বিউটি ক্যামেরা অ্যান্ড ফানি ফিল্টারস।
৩৪.সেলফি বিউটি ক্যামেরা প্রো।
৩৫.প্রো সেলফি বিউটি ক্যামেরা।
সূত্রঃ সময় নিউজ টিভি