কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি না করতে পারলে সর্বনাশ !

সম্পাদক-প্রকাশকঃ মারুফুর রহমান মারুফ
শনি, 04.07.2020 - 04:37 AM
Share icon
Image

সময় ওয়েবডেস্ক।। করোনা মহামারির কারণে দেশের পরিস্থিতি আন্দাজ করা যাচ্ছে না। অথচ সামনে কোরবানির ঈদ। এই ঈদে গরুর হাট ঠিকমতো বসতে পারবে কি-না, হাট বসলেও ক্রেতা পাওয়া যাবে কি-না, আর ক্রেতা পাওয়া গেলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যাবে কি-না এ রকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে খামারিদের মনে।

জামালপুরের মাদারগঞ্জের চরভাটিয়ানি পশ্চিম পাড়ার মেসার্স জাকারিয়া গাভির খামারের মালিক আনিছুর রহমানের মাথায়ও একই চিন্তা। এবার তিনি ৮৩টি ষাঁড় ও বলদ (বৈল) লালন-পালন করছেন। তার এই গরুগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন একটি গরুর ওজন ১৫ মণ, যার দাম চাওয়া হচ্ছে তিন লাখ টাকা। আর ২২ থেকে ২৫ মণ ওজনের বলদ (বৈল) ও ষাঁড়ের যার দাম পাঁচ লাখ টাকা ধরে রেখেছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের সর্বনাশ হবে।

আনিছুর রহমান আগে ধান, পাট চাষ করতেন। ২০-২৫ বিঘা জমি চাষ করেও তার অভাব ফুরাত না। ২০০৯ সালে পাঁচটি ষাঁড় ও পাঁচটি গাভি নিয়ে তিনি গরু পালন শুরু করেন। পরের বছর তিনি ১০টি ষাঁড় পালন ও বিক্রি করে হিসাব-নিকাশ করে দেখেন ২০-২৫ বিঘা জমির আবাদের চেয়ে অনেক বেশি লাভ হয়েছে। তখন থেকে তিনি চাষাবাদ ছেড়ে দেন। শুধু পাঁচ বিঘা জমি গরুর ঘাস চাষ বাবদ রেখে বাকি সব বর্গা দিয়ে দেন। এখন তার খামারে ৮৩টি ষাঁড় ও বলদসহ মোট ১৫০টি গরু আছে। খামারে গরু মোটাতাজাকরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় আনিছুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘এবার কোরবানির জন্য যেসব খামারিরা পশুগুলো মোটাতাজা করেছেন, এগুলো এবার বিক্রি করতে না পারলে তাদের সর্বনাশ হবে। কারণ এই গরু বিক্রি করতে না পারলে আগামী একবছর অপেক্ষা করতে হবে। এই এক বছরে ওই গরুর পেছনে খাওয়া ও শ্রম বাবদ যে খরচ হবে তাতে পোষাবে না। তাছাড়া গরু বেশিদিন রাখলে চর্বি ধরে যায়, সেই গরু নিয়ে অনেক রিস্ক থাকে। অনেক সময় চর্বি আটকে গরু মারাও যায়। একটা গরু মারা গেলে ১০টি গরুর লাভের টাকায়ও পোষায় না। তিনি বলেন, এবার করোনার কারণে কী পরিস্থিতি হবে তা বুঝতে পারছি না। এই চিন্তা করতে গেলে রাতে ঘুম হয় না।’

‘অনলাইনে বা এলাকায় গরু বিক্রির সুযোগ আছে কি-না’-এমন প্রশ্নের জবাবে এই খামারি বলেন, ‘অনলাইনে আমরা কখনও গরু বিক্রি করিনি। তবে আমাদের কাছ থেকে ঢাকার পার্টি গরু কিনে অনলাইনে বিক্রি করে। কোরবানির এক মাস আগে আমাদের কাছ থেকে তারা যে গরু আড়াই লাখ তিন লাখ টাকা দিয়ে কেনেন সেসব গরু তারা নিজেদের খামারের কথা বলে, দামি দামি খাবারের কথা বলে বা ফলমূল খাইয়েছি ইত্যাদি নানা কথা বলে শেষ পর্যন্ত সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেছেন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবার কোরবানির দেড় দুই মাস আগে থেকেই ঢাকার পার্টিসহ চট্টগ্রাম, সিলেটের পার্টি আসে। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত কোনো পার্টি গরু নেয়ার জন্য আসেনি। ঈদের আর মাত্র অল্পদিন বাকি আছে। এখন তাদের আর আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তিনি বলেন, এত বড় গরু এলাকায় কেনার মতো কোনো গ্রাহক নেই।’

‘ওজনের ভিত্তিতে গরুর কেমন দাম চাচ্ছেন’-এমন প্রশ্নে খামারি আনিছুর রহমান বলেন, ‘এটা তো এখন বলা কঠিন। কোরবানির গরু বাজারদর এবং সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে। তবে যে গরুগুলোর ওজন সর্বনিম্ন ১৫ মণ ওজন সেগুলো তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা গেছে ইতোপূর্বে। আর ২২ থেকে ২৫ মণ ওজনের গরুগুলো পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, নিজের খামারের যেটা সেরা বাছুর হয় সেটা মোটাতাজাকরণের জন্য রেখে দিই। আর তা নাহলে ছোট থাকতেই বিক্রি করে দিই। এছাড়া আমি সারাবছর প্রতিটি দিন কোনো না কোনো হাটে যাই। কোনো গরু পছন্দ হলেই কিনে নিয়ে আসি।’

৪০ থেকে ৫০টি গরু ৮ থেকে ৯ মাস লালন-পালন করেন আনিছুর রহমান। এক লাখ ৪০ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায় গুরু কিনে নয় মাস তার পেছনে আরও ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। কোরবানির ঈদে এই গরুগুলো পৌনে তিন লাখ থেকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

খামারি আনিছুর রহমান বলেন, বর্তমানে ভূষির যে দাম তাতে গরু লালন-পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া পশুর ওষুধপত্রের দামও বেশি। খড়ের দাম দুই বছর আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গরু লালন-পালনের খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়।

Share icon