শেরপুরের নকলায় চন্দ্রকোনা ইউপি নির্বাচনে আমরা দল ও প্রতীকের বিপক্ষে নই, ব্যক্তির বিপক্ষে ঐক্যবদ্ধ - ইউনিয়ন আ'লীগ সভাপতি মুখলেছ
নিজস্ব সংবাদদাতা: শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুখলেছুর রহমান মুখলেছ বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ বা নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে নই। এবার আমরা ব্যাক্তির বিপক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা পঁচাত্তর পরবর্তী থেকে শেখ মুজিবের আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করি। অপরদিকে এই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাজু সাঈদ সিদ্দিকী টাকার বিনিময়ে দলের পদ বাগিয়ে নেন। এছাড়াও ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগে আসার আগে অন্য দলের সমর্থক ছিলেন তিনি।’
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার চন্দ্রকোনা বাজারে আ. লীগের ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামরুজ্জামানের নির্বাচনী কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা মুখলেছুর রহমান মুখলেছ।
মুখলেছুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘চন্দ্রকোনা ইউনিয়নে এখন হাইব্রীড নেতা দিয়ে আওয়ামী লীগ ভরপুর। আমরা পঁচাত্তর পরবর্তী থেকে শেখ মুজিবের আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করি। অপরদিকে এই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাজু সাঈদ সিদ্দিকী টাকার বিনিময়ে দলের পদ বাগিয়ে নেন। এ ছাড়াও ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগে আসার আগে অন্য দলের সমর্থক ছিলেন তিনি। আমরা এই ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি। কিন্তু নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাজু সাঈদ সিদ্দিকী আমাদের কোন মূল্যায়ন করেন না। তিনি টাকার বিনিময়ে গুন্ডা সন্ত্রাসী পালন করেন। গত ইউপি নির্বাচনে সাজু টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন কিনেছিলেন। এবারও সেই কাজই করেছেন। তাই আমরা বাধ্য হয়ে চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতা-কর্মী দলের আরেক সদস্য আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান গেন্দুর নির্বাচন করছি। সাধারণ ভোটারদের সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক আছে। আমরা আশাবাদী সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।’
এ সময় আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান গেন্দু বলেন, ‘গত ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় সাজুর কর্মী-সমর্থকেরা আমার লোকজনের উপর হামলা চালান। সঠিক সময়ে পুলিশ এসে ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেসময় পুলিশ চন্দ্রকোনা বাজারে না আসলে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হতো। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাজু সাইদ ছিদ্দিকীর লোকজনের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে আমার বড় ভাই চন্দ্রকোনা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে সাকিরুল ইসলাম উল্লাস মারাত্মক আহত হন। ইতিমধ্যে আমার ভাতিজা উল্লাসের নাকের হাড় ভেঙ্গে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তাদের হামলায় আমাদের ১০ জন কর্মী আহত হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাজুর লোকজন বলাবলি করছে চন্দ্রকোনা বাজারে আনারসের কোন কর্মী ও সমর্থক থাকতে পারবে না। গতবার সাজু আমার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে সিল মেরে পাশ করেছে। এবারও সাজু তাই করবে। তাই আমি দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, তারা যেন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চন্দ্রকোনাবাসীকে উপহার দেন।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাজু সাইদ ছিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছি। আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান গেন্দু ও তার কর্মীরা আমার পোস্টার ছিড়েছে। সেটি বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের উপর চড়াও হয় ও হামলা করে। ইতিমধ্যে আমাদের ৭ জন কর্মী নকলা উপজেলা হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
এ ব্যাপারে নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার বিকেলে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর (আনারস) নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়েছে-এমন অভিযোগে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষে চন্দ্রকোনা কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্তত ১৭ জন আহত হন। চন্দ্রকোনা বাজারে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।