দক্ষিণ এশিয়ায় হৃদরোগের সংখ্যা বেশি কেন ?
মহেন্দ্র আগারওয়াল কখনো ভাবেননি যে তার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তিনি সবসময় নিরামিষ খান। প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করেন। তাছাড়া শরীরের ওজন যাতে বেড়ে না যায় তার প্রতিও সচেতন থাকতেন সবসময়। তার রক্তচাপ আর শরীরে কোলেস্টরেলের মাত্রাও ছিল স্বভাবিক।
তবে এতকিছুর পরেও ২০১৩ সালের জুনে তিনি শাস্বকষ্টে ভোগা শুরু করেন। এমন অবস্থা দেখে তার স্ত্রী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় ৬৩ বছর বয়সী আগারওয়ালের দুইবার এমন অবস্থা হয়েছে। যা হলে একজন মানুষের শরীরে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর তাই তার শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে বেশ কয়েকবার অপারেশন করাতে হয়।
আগারওয়াল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্যান জোস শহরের একটি ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন। তিনি বলেন, আমি সারাদিন বেশ সক্রিয় থাকি তাছাড়া আমি খুব স্বাস্থ্যকর খাবারও খাই। আমার স্ত্রী প্রতিদিন সে মাফিক ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আমার কাছে এটা বেশ আশ্চর্যের যে আমার কেন এমনটা হলো?
আগারওয়ালের এতসব ভালো খাদ্যাভাস আর শারীরিক যত্নের পরেও যে এমনটা হওয়ার কারণ হচ্ছে তার পূর্বপুরুষ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। হৃদরোগ এখন বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মরণব্যাধি রোগ হিসেবে মহামারি আকার ধারণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন- ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের মানুষ বিশ্বের বাকি মানুষের চেয়ে চারগুণ বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
স্ট্যানফোর্ড সাউথ এশিয়ান ট্রানজিশনাল হার্ট ইনিশিয়েটিভ এর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আভা খান্দেলওয়াল বলছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রত্যেকটি মানুষের হৃদরোগের বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর অনেক সময় দেখা যায় অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হয় প্রাণ হারাচ্ছেন নয়তো অকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. অলকা কানায়া বলছেন, ‘বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২০ থেকে ২৫ শতাংশই দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হৃদরোগ।’
গবেষকরা বলছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্বাভাবিক শরীর রয়েছে এমন ৪৪ শতাংশ দক্ষিণ এশীয়দের দুই অথবা ততোধিক মেটাবলিজম সিনড্রোম রয়েছে। এটা এমন একটা সমস্যাজনিত অবস্থা, যা হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মেটাবলিজম সিনড্রমের মধ্যে রয়েছে যেমন- হাই ব্লাড সুগার, হাই ট্রাইগ্লিসেরাইড, হাইপারটেনশন অথবা হাই ডেনসিটি লিপোপ্রটিন অবনতি ।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস