”ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙ্গালির ইতিহাস”– জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
রেজাউল করিম রেজাঃ হ্যাঁ, বলছি একটি ইতিহাসের কথা–জাতির পিতার সেই অনাবদ্য সৃষ্টি মহাকালের এক কালজয়ী ইতিহাস বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কথা।
"বাংলাদেশ ছাত্রলীগ" এই শব্দটির সাথে জড়িত একটি জাতি ও দেশের ইতিহাস। একটি শব্দের সাথে সহস্র প্রানের প্রেম,আবেগ,অনুভুতি, ভালবাসা, ভালোলাগা আর ভাতৃত্বের বন্ধন।
মহাকালের ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই সংগঠনের স্রষ্টা স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ।
ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান সকল নেতাকর্মীদের শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
শ্রদ্ধা জানাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ঘাতকের গুলিতে নিহত সকল শহীদদের প্রতি। শ্রদ্ধা জানাই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ১৭ হাজার নেতাকর্মীদের প্রতি। শ্রদ্ধা জানাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রয়াত সকল নেতাকর্মীদের প্রতি।
শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন,
জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন। তার জীবন ও যৌবনের উত্তাপে গড়া শুদ্ধ সংগঠন,সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলার দীর্ঘ ৭৩ বছর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি সময়ের দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। জন্মের প্রথম লগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার,,বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধীকার আন্দোলনের ৭ দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।প্রতিষ্ঠা কাল থেকে গৌরব ঐতিহ্য সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘপথচলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হারিয়েছে তার সহস্রধিক নেতাকর্মীকে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রানের সংগঠনের ১৭ হাজার বীর যোদ্ধা তাদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল সবুজের পতাকা,এঁকেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন-সার্বভৌম মানচিত্র।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর মাঝে আছে তরুন মুজিবের নান্দনিকতা ও আদর্শ, আছে ক্ষুদিরামের প্রত্যয়, আছে সুকান্তের অবিচল চেতনা। তাই তো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতি ও সামাজিক স্বার্থসুক্ষায় মঙ্গল প্রদীপের আলোকবর্তিকা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারদিগন্তে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মতই এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আরেক হাতে রণতূর্য। আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি দুস্থ শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকারণ বিতরণ, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্ত দান, বৃক্ষরোপণ, পথশিশুদের জন্য ভাম্যমান পাঠদান কর্মসূচি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের চর্চা।
ছাত্রলীগ আর মানিবিকতা এই দুটি শব্দ একই সূত্রে গাথা। যেখানেই মানবিক বিপর্যয় সেখানেই ছাত্রলীগ। সৃষ্টির শুরু থেকেই এখনো অবধি ছাত্রলীগ মানবিকতার জয়গান গায়। শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম কোভিড -১৯ নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মানবিকতা যখন বিপন্ন ঠিক তখনই সেই চির-চেনা রুপে ইতিহাসের কালজয়ী যোদ্ধা জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী তাদের এবং তাদের পরিবারের সকলের জীবনকে বিপন্ন করে প্রানের চেয়ে প্রিয় মাতৃভূমির মানুষের নিরাপদে রাখতে ছুটে চলেছেন মাইক ও লিফলেট হাতে বাংলার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত।
ত্রান কর্তা হয়ে সাধারন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী, মাস্ক, সাবান, হ্যন্ড স্যনিটাইজার, জীবাণু নাশক স্প্রে, জরুরী ঔষধ ও অক্সিজেন সেবা,করোনা মহামারীকালিন সময়ে নিজের ছেলে মৃত পিতার লাশ ফেলে রেখে চলে গিয়েছে ঠিক তখনো করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ নিজ হাতে দাফন এবং সৎকার করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কৃষি কাজের শ্রমিক সংকটে খাদ্য ঘাটতির কথা মাথায় রেখে কাস্তে হাতে কৃষকদের সোনালি ধান কেটে গোলায় তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মানবিকতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর সকল দেশের কোন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও তার ধাঁরের কাছেও আসতে পারেনি।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শুধু একটি ছাত্র সংগঠন নয় এটি আজ কোটি তারুণ্যের প্রানের উচ্ছাস, আবেগ, ভালোবাসা, ভালোলাগা আর মহাকালের ইতিহাস সৃষ্টিকারী একটি নাম। একটি স্ব -স্বাধীন জাতির সকল অর্জনের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে থাকা একটি নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এমন এক বিরল অনুপম অর্জনের অধিকারী যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র সংগঠনের নেই। স্বাধীনতার ইশতেহার , জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির জনক ও স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইতিহাসের কালপন্জিতে অমোচনীয় ও চির ভাষ্কর হয়ে আছে।
বাঙালির স্বপ্নের সারথী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দীর্ঘ ৭৩ বছর পথ চলার পাথেয় হয়ে আছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক প্রেরণা।
জাতির জনকের ভাষায় ” নেতার মৃত্যু হতে পারে, কিন্তু সংগঠন বেঁচে থাকলে আদর্শের মৃত্যু হতে পারে না।“ সেই মৌল বাণীকে পাথেয় করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে জাতির পিতার অবিনশ্বর চেতনার কান্ডারি হয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে চলছে।
বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আদর্শিক কর্মীরা প্রমাণ করেছে–”’আজও এখানে, এদেশে বঙ্গবন্ধু জন্ম নেন রক্ত ভেজা মাটি থেকে মুক্তির বার্তা দেয়”’ আর সেই মুক্তির বার্তা বাহক হচ্ছে ৫৬ হাজার বর্গ মাইল বাংলার বুক জুড়ে বিচরণ কারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীবৃন্দ।
জাতির পিতার অনাবদ্য সৃষ্টি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে বাংলাদেশের ছাত্রলীগের সোনালি অর্জন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী থেকে একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক আমাদের মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী থেকে একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক হওয়ার মাধ্যমে আজকে বিশ্ব নেতৃত্বের দাবিদার আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনালি অর্জন দেশরত্ন শেখ হাসিনার আদর্শিক কর্মী হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সোনালী অতীতের মত সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়বে। আর এজন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রুপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রযুক্তি দক্ষ ছাত্র সমাজ তৈরিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করছে ও করবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকিতে দাড়িয়ে আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের মানচিত্র যতদিন বহমান থাকবে ঠিক ততদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ স্ব গৌরবে মাথা উঁচু করে এ দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাবে।
এমন একটি সংগঠনের কর্মী হতে পারা আমার জন্য অনেক আনন্দের এবং আমৃত্যু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী হয়ে বেঁচে থাকাটা আমার জন্য অনেক সৌভাগ্যের।
৫৬ হাজার বর্গমাইল বাংলার দিক – দিগন্তের প্রতি বর্গফুট জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ক্ষুদ্র নেতাকর্মী হয়ে আমরা জাতির পিতার আদর্শে বলীয়ান হয়ে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আলোকিত করবো আমাদের এই জনপথকে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে বর্তমানকে করবো আরো সমৃদ্ধ ও তাৎপর্যপূর্ণ। জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভবিষ্যৎতের জন্য নিজেদেরকে গড়ে তুলবো আত্মপ্রত্যয়ী ও প্রতিশ্রুতিশীল যোদ্ধা হিসেবে।
যুদ্ধাপরাধী,মৌলবাদ, জামাত- শিবিরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ইস্পাত সমান দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিহত করবো সকল অপশক্তিকে। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে ইতিহাস নির্ধারিত অগ্নিদ্বীপ্ত ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মুছে দিব সব গ্লানি । প্রজ্ঞা, মেধা, সাহস আর আপোষহীনতার সমন্বয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে গড়ে তুলবো হিমালয় সমান উচ্চতা নিয়ে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকিতে এটাই আমাদের শপথ।
লেখক
রেজাউল করিম রেজা
সাধারন সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শেরপুর জেলা শাখা।