অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছেনা কিশোর গ্যাং এর আঘাতে আহত মমিনের

স্টাফ রিপোর্টার
মঙ্গল, 28.03.2023 - 01:10 PM
Share icon
Image

অর্থের অভাবে বন্ধ হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত মমিনের (১৫) চিকিৎসা। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে দিনমজুরের ছেলে মমিন। মমিনের দু 'পাশে বসে সারাক্ষণ শুধু চোখের জল ফেলছে মমিনের মা মমতা বেগম আর বাবা খোকন মিয়া। ঘটনার প্রায় ১৪ দিন অতিবাহিত হচ্ছে। আজো কথা বলতে পারছে না মমিন। শুধু মা বাবার দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে কাঁদছে। কান্নায় যেন ওদের একমাত্র সান্তনা। নির্মম এ ঘটনাটি ঘটে গত ১৫ মার্চ রাতে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনীয়া বাজারের ওয়াজ মাহফিল থেকে গড়খোলা গ্রামে বাড়ি ফেরার পথে। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সরেজমিন গেলে আহত মমিনের পরিবার, গ্রামবাসী, জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমন তথ্য।

জানা যায়, গড়খোলা গ্রামের খোকন মিয়া শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মমিন এবার কুড়িকাহনীয়া সাউথ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। কুড়িকাহনীয়া বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় গড়খোলা গ্রামে মমিনের বাড়ি। এ সুযোগে সব সময় কিশোর গ্যাংয়ের অশালীন আচরনের স্বীকার হতে হয় মমিনসহ গ্রামের সহপাঠীদের। কিশোর গ্যাংদের খারাপ কাজে সঙ্গ না দেয়ায় তাদের সাথে মানসিক দ্বন্দ শুরু হয়। গত চার মাস আগে মমিনের মা বাবা কিশোর গ্যাং লিডার আল আমিনের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছে। তার ছেলে যেন স্কুলে আসতে পারে। তবুও মানেনি।

গত ১৫ মার্চ বুধবার রাতে মমিন ও সহপাঠী শাকিল (১৫) কুড়িকাহনিয়া মাদ্রাসা মাঠে ওয়াজ মাহফিল শুনে বাড়ি ফিরছিল। পথে ওত পেতে থাকা কোরবান ও আল আমিন সহ ১০/১২ জন ধারালো চাপাতি, লোহার রোড ও চেইন দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে মমিন ও শাকিলকে। পরে এলাকার লোকজন ঘনাস্থল থেকে তাদেরকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। এ সময় আশংকাজনক অবস্থায় মমিনকে প্রথমে শেরপুর সদর হাসপাতালে নেয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার বেগতিক দেখে তাকে ঢাকা নিউরো সাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। টানা ১০ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আনা হয় মমিনকে।

এদিকে ঘটনার রাতেই মমিনের দাদা আজিজুর রহমান (৭০) বাদী হয়ে শ্রীবরদী থানায় ১০ জনসহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জন কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই কোরবান আলী (১৬), আল-আমিন (১৮), খুরশেদ আলী (২০), এলাইজ মিয়াা (১৭), মাসুদ রানা (১৮) ও ইলিয়াস (১৮) কে গ্রেফতার করে। পরদিন আদালতে পাঠালে আদালত তাদেরকে গাজীপুরের জাতীয় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়। এ ঘটনায় জড়িত সাজু মিয়া (১৮), সেলিম মিয়া (১৮). হালিম মিয়া (১৮) ও জুয়েল মিয়া (১৭) পলাতক রয়েছে।

এখন টাকার অভাবে ক' দিন থেকে মমিনকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মমিন বাঁচতে চায়। ফিরতে চায় স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু বিধি বাম ! স্বাভাবিক জীবন তো দূরের কথা, টানা ১৪ দিন যাবৎ কথা বলছে না মমিন।

যে মমিন বাবার অভাব ঘোচাঁবে বলে শান্তনা দিতো। আজ সে নিজেই মৃত্যুর প্রহর গুনছে। হামলার প্রায় দুই সপ্তাহ পর জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে পারছেনা। শুধু ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকে। এ সময় ওর চোখে জল দেখে কাদঁতে থাকে ওর মা বাবা। ফুটে ওঠে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা।

খোকন মিয়া বলেন, “ওরা আমার পোলাডারে মাইরা পুঙ্গু কইরা দিছে। আমি কামলা দিয়ে সংসারই চালামু, না চিকিৎসার খরচ দিমু? ১০/১২ দিন মমিসিং-ঢাহা (ময়মনসিংহ-ঢাকা) দৌড় পাইরা দুই লাখ টাহার উপরে ঋণ অইছে। অহনও পোলাডা মরার মতো পইরা আছে। কার কাছে বিচার চাইমু ?

মমতা বেগম বলেন, “ স্বামী ইট ভাঙ্গার কাম করে। পুলাডার মুখের দিকে চাইয়া দুঃখ কে দুঃখ মনে করিনাই। দুই বেলা ভাত খাই। দুপুরের খাবারের টাহা বাচাঁয়ে পুলার পড়ালেখার খরচ জোগাই। এহন বাড়ি ভিটা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে অইবো। তবুও পোলাডা ভালা হোক। এডাই আমগোর শেষ ভরসা। পোলার কিছু অইলে আমরা কই যামু ?

স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছালাম বলেন, ওরা কিশোর গ্যাং বানাইছে। দূর থেকে যারা আসে ওই সব ছেলেরা কথা না শুনলে মারধর করে। ওদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলারও সাহস পায়না।

কুড়িকাহনীয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ খান নুন বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নইলে এই কিশোর গ্যাং ভবিষ্যতে এলাকায় আরো অনেকের ক্ষতি করতে পারে।

শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘটনার দিনই ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামীদেরও গ্রেফতার করা হবে। 

কিশোরর গ্যাংদের হামলায় মৃত্যু শয্যায় মমিনের চিকিৎসায় এগিয়ে আসবে বিত্তবানরা। মমিন সুস্থ্য হয়ে আলোকিত করবে তাদের সংসার। অপরাধীরাও গ্রেফতার হবে দ্রুত। এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মানুষসহ সকলের।

Share icon