শেরপুরে পলিনেট চাষে ফেরদৌসের সাফল্য: পরিদর্শনে অতিরিক্ত সচিবের প্রশংসা

স্টাফ রিপোর্টার
শুক্র, 21.11.2025 - 04:42 PM
Share icon
Image

মারুফুর রহমান, শেরপুর॥ প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫

শেরপুরে প্রযুক্তিনির্ভর পলিনেট (গ্রিনহাউস) চাষ পদ্ধতি কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব নাসির-উদ-দৌলা। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জনকণ্ঠের এ প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, “মাঠপর্যায়ে এই ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ফেরদৌস মিয়ার পলিনেট হাউস আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আরও তরুণ উদ্যোক্তা যাতে এ প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং দক্ষতা অর্জন করে কৃষিতে যুক্ত হতে পারে, সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও প্রকল্পভিত্তিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে শেরপুর সদর উপজেলার চরমুচারিয়া ইউনিয়নের টালিয়াপাড়া গ্রামে যুব উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস মিয়ার পলিনেট হাউস পরিদর্শনে এসে অতিরিক্ত সচিব এসব কথা বলেন। ওই সময় তিনি উৎপাদন ব্যবস্থার বিভিন্ন ধাপ ঘুরে দেখেন এবং উদ্যোক্তার দক্ষতা ও পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনাকে প্রশংসা করেন।

জনকণ্ঠের এই প্রতিনিধির সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মধ্যে সারিবদ্ধ ট্রেতে টমেটো, মরিচ, ফুলকপি, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, বেগুন ও গাঁদা ফুলসহ প্রায় ৬০ হাজার চারা পরিচর্যা করা হচ্ছে। একটি পলিনেট হাউসের উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১ লাখ চারা, যা সম্পূর্ণ সার ও কীটনাশকমুক্ত। সারা বছর চাষাবাদ সম্ভব হওয়ায় কৃষকদের কাছে এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

উদ্যোক্তা ফেরদৌস মিয়া বলেন,“২০২৩ সালে জেলা কৃষি অফিস ১০ শতক জমিতে প্রথম পলিনেট হাউসটি নির্মাণ করে দেয়। শুরুতে আড়াই লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে হয়েছিল। এখন একটি পলিনেট থেকে মাসে গড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। বছরে খরচ বাদে আয় দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ টাকা।”

তিনি জানান, তার মোট ৭৫ শতক জমির মধ্যে ১০ শতকে প্রথম পলিনেট স্থাপিত হয়েছে এবং বাকি জমিতে আরও দুই-তিনটি পলিনেট হাউস নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তবে এর জন্য সহজ শর্তে ঋণ বা সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন। পলিনেট হাউসকে কেন্দ্র করে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। একজন ম্যানেজারসহ পাঁচজন নারী কর্মী দৈনিক কাজ করছেন।

পলিনেট হাউজের ম্যানেজার মো. বাবুল মিয়া বলেন, “চলতি রবি মৌসুমে হাজার হাজার চারা শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহের কৃষকদের কাছে বিক্রি হয়েছে। মানসম্মত হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।”

পার্শ্ববর্তী উদ্যোক্তা শহীদ মাস্টার বলেন, ফেরদৌসের সফলতা দেখে তিনিও পলিনেট স্থাপনে আগ্রহী হয়েছেন। তিনি দ্রুত উদ্যোগ নিতে সরকারি সহায়তা কামনা করেন।

সদর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, “পলিনেট প্রযুক্তি শেরপুরে কৃষিতে নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে। অতিবৃষ্টি, খরা, তাপমাত্রার ওঠানামা বা কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকেও চারা সুরক্ষিত থাকায় অসময়ে সবজি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং উৎপাদন খরচ কমছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, পলিনেট হাউস সম্প্রসারণে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে আরও উদ্যোক্তাকে প্রযুক্তির আওতায় আনা যায়।

শেরপুর সদর উপজেলার পলিনেট হাউস পরিদর্শন ও কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব নাসির-উদ্‌দৌলা এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোস্তফা কামাল।

শেরপুরের কুশুমহাটি ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর দরিপাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা ফেরদৌস মিয়ার লক্ষ্য- বৃহৎ বাণিজ্যিক চারা উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেরদৌসের এই সাফল্য শেরপুরের কৃষিকে নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

Share icon