শেরপুরের সীমান্ত জনপদের ৬শত শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করলো বসুন্ধরা গ্রুপ
শেরপুরে গারো পাহাড়ের পাদদেশে সীমান্ত জনপদ ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারি শীতার্ত দরিদ্র-অসহায় গারো, কোচ, হাজং, বর্মণ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠি বসুন্ধরা গ্রুপ। এই শীতের কষ্ট লাঘবে ১৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে গজনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আড়াই শতাধিক নৃ-জনগোষ্ঠির মাঝে শীতের কম্বল বিতরন করা হয়েছে। কেবল ঝিাইগাতী উপজেলাতেই নয়, নকলা ও নালিতাবাড়ী বিভিন্ন এলাকার আরও চার শতাধিক হতদরিদ্র পরিবার, মসজিদের ইমাম, এতিম শিক্ষার্থী, পঙ্গু ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সহ সাড়ে ৬ শতাধিক মানুষের মাঝে কালেরকন্ঠ শুভসংঘের মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কম্বল পেয়ে খুশী দরিদ্র-অসহায় শীতার্তরা।
কম্বল হাতে পেয়ে ঝিনাইগাতীর ছোট গজনী এলাকার কৃষানী পারমেন সাংমা (৫৬) বলেন, ‘এহন আমগরে পাহাড়ে দারুণ শীত পড়ছে। কম্বলডা পাইয়া খুব উফুগার অইলো। এই কম্বলেরর উমে ইবারের শীতটা কাটাবো। বসুসন্ধরার মালিকে এই কম্বল পাডাইছে। ইশ্বর তারে আর তার পরিবারের সবাইরে আরো বালা করুক। তাদেরে আরও মানুষের উফুগার করার ক্ষেমতা দেক, এই আশীর্বাদ করি।’ হালচাটি গ্রামের কৃষানী শিরামনি কোচ (৬২) বলেন, এই কম্বলডা পাইয়া কী যে উকার হইলো, সেইডা বইলা বুঝান যাবো না। এইবার আর শীতের কামড় খাওয়ুন লাগতো না। কম্বলডা জড়াইয়া ইবার শীতটা পার কইরা দিবার পামু।
বিকেলে ঝিনাইগাতীর গজনী এলাকায় কম্বল বিতরন উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ. ওয়ারেজ নাইম। এতে দৈনিক কালেরকন্ঠ শুভসংঘের কেন্দ্রিয় কমিটির পরিচালক জাকারিয়া জামান, সাধারন সম্পাদক শামিম আল আমিন, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, সদস্য ইমতিয়াজ চৌধুরী, মিনহাজ উদ্দিন, নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ আহ্ববায়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মন, কোচ নেতা মিঠুন কোচ জীবন হাজং, ঝিনাইগাতী শুভসংঘ সভাপতি আরিফুল ইসলাম, দৈনিক কালেরকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি হাকিম বাবুল, শ্রীবরদী প্রতিনিধি রেজাউল করিম বকুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে কম্বল বিতরণকালে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক। এ সময় প্রেসক্লাব নালিতাবাড়ীর সভাপতি এমএ হাকাম হীরা, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম, মঞ্জুরুল আহসান, নালিতাবাড়ী শুভসংঘ উপদেষ্টা সদরুল আমীন জাবীর, সাদ্দাম হোসেন, সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. ইবাদ মোল্লা সহ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে নকলা সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্বল বিতরনী অনুষ্ঠানে নকলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে এবং সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিসেট্রট কাওসার আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, নকলা পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উমর ফারুক বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় কালেরকণ্ঠের নকলা উপজেলা প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন সরকার সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থি ছিলেন।
কম্বল নিতে এসে ৭০ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা জামালউদ্দিন বলেন, কালেরকণ্ঠ শুভসংঘের শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এভাবে তারা আরো বেশী বেশী করে মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করুক সেই কামনা করি। নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের কালেরকণ্ঠ শুভ সংঘের উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ সহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বসুন্ধরার মালিক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। আমরা তাদের উত্তরোত্তোর আরো সাফল্য এবং সমৃদ্ধি কামনা করি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম বলেন, শীতার্ত মানুষের মাঝে বসুন্ধরা গ্রুপের এই কম্বল উপহার দারুণ কাজে লাগবে। তারা এভাবেই যেন সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, সেই কামনা করছি। আমার এলাকায় দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালেকন্ঠ শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। শুভসংঘের আয়োজনে শেরপুর জেলায় একহাজার কম্বল বিতরণের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার সাড়ে ৬০০ মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।