শেরপুরে বাইরে তালা দিয়ে পরিবারের ৪ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ

শেরপুর প্রতিনিধি
শনি, 12.03.2022 - 04:16 PM
Share icon
Image

শেরপুরে বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে পরিবারের ৪ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার (১১ মার্চ) রাত ২ টায় শেরপুরের শ্রীবরদি উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের ঢনঢনিয়াতে ওই ঘটনা ঘটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, যে ঘরের বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলানো ছিল। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত বাবুল মিয়া ঝুঁকি নিয়ে টিনের বেড়া ভেঙ্গে বাইরে বের হয়। আগুন নেভাতে ও দুই সন্তান, বাবুলসহ ও তার স্ত্রীকে বের করতে সহযোগীতার কথাও জানান তারা। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসী শ্যামল মিয়া বলেন, শুক্রবার (১১ মার্চ) মধ্য রাতে হঠাৎ ডাক চিৎকারের শব্দ শুনি। ঘর হতে বের হয় দেখি, বাবুলের ঘরে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এরপর আমরা আরো কয়েকজন মিলে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ততক্ষণে ঘরের সবকিছু পুড়ে শেষ। বাবুল মিয়া একজন দরিদ্র পরিবারের মানুষ। তিনি দিন আনে দিন খায়। তারা ৫ ভাই ৩ বোন। বোনেরা বাবুলের সাথে ভাল সম্পর্ক। কিন্তু বাকি ৪ ভাই তার সাথে সব সময় অন্যায়, অবিচার করে। যেহেতু চুলায় আগুন ছিল, বৈদ্যুতিক কোন শক সার্কিট হয়নি। তাহলে এতরাতে আগুন কোথা থেকে আসলো। এটা নিশ্চয় কারো ষড়যন্ত্র।

 

Image

 

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাবুল মিয়া জানান, ওই দিন বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) আমি সন্ধায় বাড়িতে আসি। রাতে খেয়ে খাটে ঘুমিয়ে যাই। হঠাৎ মধ্যরাতে স্ত্রীর ডাকাডাকি শুনতে পাই। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ঘরের চারপাশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ঝুঁকি নিয়ে বের হতে গিয়ে দেখি ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। পরে ঘরে থাকা একটি বড় বাঁশ দিয়ে টিনের বেড়া ভেঙ্গে বাইরে বের হই। আমরা ৫ ভাই ও ৩ বোন। বোনেরা প্রায়ই আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে। তখন তারা আমার কাছে তাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওয়ারিশ চায়। এবিষয়ে আমি অন্য ৪ ভাইদের সাথে কথা বলতে গেলে, তারা আমাকে নানান ভাবে হুমকি দেয়। এছাড়াও নানান বিষয়ে তারা আমাকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছে। গত ইউপি নির্বাচনে তারা ছিল এক চেয়ারম্যানের সমর্থক। আমি ছিলাম অন্য চেয়ারম্যানের সমর্থক। এবিষয়েও তারা আমাকে হেনস্থা করেছে। আগুনে আমার সব নিয়ে গেছে। আমার ঘরে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ছিল, গোলায় ধান ছিল, অন্যানো আসবাবপত্র ছিল, চাউল ছিল। সব পুড়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। থানায় মামলা করেছেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে বাবুল জানান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আমাকে সেটি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন শুক্রবার (১১ মার্চ) রাতে এবিষয়ে সমাধানের জন্য বসবেন। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। আজ শনিবার (১২ মার্চ) আমি থানায় মামলা করবো।

 

Image

 

বাবুলের স্ত্রী কোকিলা জানান, আমার ২০- ২২ বছরের সংসার। দীর্ঘ জীবনে আমার দেবর-ভাসুরেরা আমাকে অনেক অত্যাচার করেছে। অনেকবার মারধর করেছে। সেই রাতে হঠাৎ পটপট শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গে। উঠে দেখি ঘরের দক্ষিণ পার্শ্বে আগুন। এরপর আমার স্বামিকে ডেকে তুলি। আমরা যেন বের হতে না পারে সে জন্য বাইরে থেকে দরজা তালা দেওয়া ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের পরিবারের ৪ সদস্যকে ঘরের মধ্যে পুড়িয়ে মারা।

নিজেদের প্রতি আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বাবুলের ছোট ভাই বাদল বলেন, আমরা ৪ ভাই কেউ একাজের সাথে জড়িত নই। আমরা চক্রান্তের স্বীকার। আমার ভাই বাবুল নিজে তার ঘরে আগুন দিয়েছে। আমি নিজে তার সাক্ষী। সেই রাতে আমি দেখেছি বাবুল তার ঘর হতে টেলিভিশন বের করে অন্য বাড়িতে নিচ্ছে। এত রাতে আপনি বাইরে কি করছিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বাদল বলেন, আমি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিলাম।

 

Image

 

এ বিষয়ে ৭ নং ভেলুয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, আমি শুক্রবার (১১ মার্চ) সকাল আটটায় ঘটনাস্থলে আসি। রাতেই খবর পেয়েছিলাম, কিন্তু এত রাতে আসা সম্ভব হয়নি। বাবুল মিয়ার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা তাকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো।

এব্যাপারে শ্রীবরদি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সুষ্ঠ তদন্তে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Share icon