এক যুগ শিকলে বন্দি জীবন, ঘরসহ চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের
শেরপুরের শ্রীবরদীতে এক যুগ ধরে বাশঁঝাড়ে শিকলে বন্দি জীবন কাটছে মানষিক ভারসাম্যহীন স্বপন বর্মণের (৩৫)। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছে না হতদরিদ্র মা বাবা। মেলেনি প্রতিবন্দী ভাতাসহ সরকারি কোনো সহায়তা। ফলে চিকিৎসার অভাবে নির্মমভাবে জীবন কাটছে এই যুবকের। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরসহ তার মেয়ের পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
নির্দয় এই ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের বীরবান্দা গ্রামের পবন বর্মণের ছেলে মানষিক ভারসাম্যহীন স্বপন বর্মণের সাথে। ঘরের পাশের বাঁশঝাড়ে গাছের সাথে হাত আর পায়ে শিকলে বন্দি জীবনে মাথার উপর দিয়েই যাচ্ছে ঝড় বৃষ্টি। দিন রাত তার কাছে সব সমান। দূর থেকে তাকে খাবার দেয়া হয়। ৫ ফুট দীর্ঘ এই শিকল নিয়ে এর মধ্যেই হাটা চলা। বৃদ্ধ বাবা পবন বর্মণ, মা সুচিত্রা রানী বর্মণ, বড় ভাই সুজন বর্মণ আর মেয়ে প্রীতি রানী বর্মণকে নিয়ে তাদের পরিবার।
ঘটনা অনুসন্ধানে তার বাড়িতে গিয়ে তার স্বজনদের কাছে জানা যায়, ছোট বেলায় সামান্য মানষিক ভারসাম্যহীন ছিল স্বপন বর্মণ। তবে চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে শুরু করেন কৃষি শ্রমিকের কাজ। তার উপর্জনে সংসারের হাল ভালই চলছিল। পরে পারিবারিকভাবে পারবর্তী রানী বর্মণ নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে শুরু করেন সংসার এবং বিয়ের দুই বছরের মাথায় এক কন্যা সন্তানের জনক হয় স্বপন। কিন্তু বিধি বাম, আবারও মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে সে। যাকে যেখানে পায় সেখানে কামড় দেয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে হাত আর পায়ে শিকলে বন্দি করে বাঁশঝাড়ের একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে। স্ত্রী পারবর্তী রানী বর্মণও চলে যায় বাপের বাড়ি। তার মেয়ে প্রীতি রানী দাদা দাদির আশ্রয়ে বড় হচ্ছেন। সে স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্ডেনে ষষ্ট শ্রেণীতে পড়া লেখা করে।
এলাকাবাসীর দাবি, এতোদিন এই মানুষটি মানবেতর জীবন যাপন করলেও কোন জনপ্রতিনিধি তাদের খোঁজ নেয়নি। সরকার যদি এই মানুষটির জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে দরিদ্র এই পরিবারটির পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। সুস্থ হয়ে আবারো ধরবে সংসারের হাল।
এব্যাপারে খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রবীণ রাজনীতিবীদ আব্দুল খালেক বলেন, আমি পরিবারটির ব্যাপারে সব সময় খোঁজ খবর রাখি। তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করি। এব্যাপারে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের সাথে প্রথম সভাতেই আলোচনা করেছি যেন তার ব্যাপারে সহায়তার হাত বাড়ানো হয়। এবং উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি। যেন মা-বাবার ভালবাসা পায় স্বপন বর্মণের শিশু মেয়েটি।
খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর স্বপন বর্মণের খোঁজ নিয়েছি এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে পরবর্তী সময়ে আবারো সরেজমিনে গিয়েছি তাদের সাথে কথা বলার জন্য। যেতেহু উপজেলা প্রশাসন এই ব্যাপারে অবগত তাই উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। এছাড়াও আমার পরিষদের পক্ষ থেকে পরিবারটির জন্য সাধ্য অনুযায়ী সহায়তার চেষ্টা করবো।
এব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার বলেন, অতি দরিদ্র এই পরিবারটির পক্ষে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব নয় এবং দীর্ঘদিন যাবৎ স্বপন বর্মণ মানবেতর জীবন যাপন করছে এই খবরটি আমি অবগত হয়েছি। এছাড়াও দ্রুত সময়ের মধ্যে তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের একটি ঘর আর তার মেয়ের জন্য শিক্ষা সহায়তার ব্যবস্থা করবো। এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শনের কথাও বলেন তিনি।